‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও, আবার আমাদের দেখা হবে’—নিহত বুয়েট শিক্ষার্থীর মা

একমাত্র সন্তান বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা-মা
একমাত্র সন্তান বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার বাবা-মা  © সংগৃহীত

রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া ও রাইসা সুলতানা দম্পতি। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। ছেলে মুহতাসিম মাসুদ (২২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে পড়ছে ঢাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে। ছেলে মেয়ের পড়ালেখাতেই বেশি গুরুত্ব দিতেন এই দম্পতি। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে একটি ফোনে দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পান মা–বাবা। আর তাতেই সুখের সংসারে নেমে আসে শোকের ছায়া। 

মুহতাসিম মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মুহতাসিমের লাশ নেওয়া হয় গ্রিনরোড এলাকার বাসায়। তাকে এক নজর দেখতে ও শেষ বিদায় জানাতে তার শিক্ষক, সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকাবাসী ছুটে আসেন তাদের বাসায়। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। 

এক পর্যায়ে আত্মীয়স্বজনের কাঁধে ভর করে একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে এবং বিদায় জানাতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে আসেন রাইসা সুলতানা। মুহতাসিমের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই অশান্ত হয়ে পড়েন মা রাইসা। একমাত্র ছেলেকে হারানোর বেদনার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্বজনরা কিন্তু কোনোভাবেই সন্তানহারা মাকে শান্ত করতে পারছিল না। পরে অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ দাফনের জন্য মিরপুরের দিকে রওনা দেওয়া হয়। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে মা রাইসা সুলতানা বলেন, ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আবার আমাদের দেখা হবে।’

প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েটের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন ছেলে মুহতাসিম। রাত হলেও ছেলে ফিরে না আসায় সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ফোন করেন মা। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে থাকার কথা জানান। এর পর ভোরে কামরুল নামে মুহতাসিমের এক বন্ধু ভোরে ফোন করে জানায়, মুহতাসিম দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

ছেলের মৃত্যুর খবর প্রথম বিশ্বাস করেননি মা রাইসা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে যায় মুহতাসিম। কথা ছিল ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। বাসায় না ফেরায় সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে ফোন দিই। ছেলে বলে পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে। রাতে হলে থাকবে, বাসায় ফিরবে না।’ ছেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি ঘুমাতে যান।

এ দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়াও। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করেন। অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের লাশের পাশে বসে মাসুদ মিয়া বলেন, পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে ছেলের মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চাওয়া হয়। মোটরসাইকেল থেকে নেমে মুহতাসিম কাগজপত্র বের করছিল। ঠিক তখনই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে এসে তার ছেলেকে চাপা দেয়। মাসুদ মিয়া বলেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জানা গেছে, গভীর রাতে সংকেত পাওয়ার পর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়েছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিন শিক্ষার্থী। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার ধাক্কায় দেয় তাদের। ঝড়ের গতিতে ছিটকে পড়েন তিনজন। ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ। গুরুতর আহত হন মেহেদী হাসান ও অমিত সাহা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকেই প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুন (২০) এবং তার দুই সঙ্গী মিরাজুল করিম (২২) ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা তিনজনও শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মুবিন আল মামুন মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। ওই প্রাইভেট কার থেকে একটি মদের খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে। আজ ডোপ টেস্টের পরে তাদের তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence