শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ল্যাব সুবিধাসহ যেসব কারণে সেরা শাবিপ্রবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। শিক্ষা ও গবেষণায় গত ৩০ বছরে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে সিলেটের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের একটি বড় অংশের লক্ষ্য শাবিপ্রবি। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে শাবিপ্রবির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।

র‌্যাংকিং: ওয়েবমেট্রিক্সের সর্বশেষ র‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে শাবিপ্রবি। র‌্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সেরা ১৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যার মধ্যে একটি শাবিপ্রবি। এছাড়া স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাসের যৌথ তালিকা অনুযায়ী বিজ্ঞান গবেষণায় দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি।

একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা: র‌্যাংকিংয়ে শাবিপ্রবির অবস্থানের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা। ২৭ টি বিভাগের প্রতিটিই উন্নতমানের ল্যাব সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। বিশেষত শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (সিএসই) এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দেশের সেরা ল্যাব সুবিধা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৬ যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত হিসেবে বিবেচিত।

অভিজ্ঞ শিক্ষক: অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স কর্তৃক প্রকাশিত র‍্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্ব সেরা গবেষকদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২২২ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৫৪২ জন শিক্ষক আছেন যাদের মধ্যে অধ্যাপক ২১৩ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৯০ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৩৩ জন এবং প্রভাষক ২৬ জন।

আবাসন সুবিধা: শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনটি ছাত্র হল এবং দুটি ছাত্রী হল রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আবাসনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়।

নয়নাভিরাম সৌন্দর্য: চারদিকে টিলাবেষ্টিত সুশোভিত ৩২০ একরের নয়নাভিরাম সবুজ ক্যাম্পাস শাবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সব কটি সড়কই ছায়াঘেরা এবং গাছপালায় সুসজ্জিত। পাঁচটি আবাসিক হলের প্রায় প্রতিটির পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড়। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রচেষ্টায় সৈয়দ মুজতবা আলী হলের পেছনের টিলায় গড়ে উঠেছে একখণ্ড চা বাগানও। এছাড়া,  দেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে শহীদ মিনারও শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। ৫৮ ফুট উচ্চতার একটি টিলায় ৬ হাজার ৮৮৬ বর্গফুট জায়গা জুড়ে এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে শহীদ মিনারে উচ্চতা ৭৮ ফুট। শহীদ মিনারটিতে পৌছাতে প্রায় ১০০ সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়।

উদ্ভাবন ও গবেষণা: উদ্ভাবন ও গবেষণায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ শাবিপ্রবিরই তৈরি। তারপর ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল, ১১ জন ডেভেলপার বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা তৈরি করতে সক্ষম হন। গ্রামীণফোন আইটি বিভাগের সহযোগিতায় পিপীলিকার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেছেন মো. রুহুল আমীন সজীব। ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইঞ্জিন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে। বর্তমানে সংবাদ পাঠ, লাইব্রেরি, কেনাকাটা, জব সার্চ, বাংলা বানান সংশোধনী ও শব্দকল্প ইত্যাদি যুক্ত করে পিপীলিকাকে আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’ও শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের তৈরি। 

এছাড়া রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছে শাবিপ্রবি। ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসার শনাক্তকরণের এ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। 

এর পাশাপাশি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বাংলা কিবোর্ডের উদ্ভাবন করে শাবিপ্রবির একদল গবেষক। সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উ খ্যই নু ও রণিত দেবনাথ আকাশের নেতৃত্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত এ বাংলা কিবোর্ড তৈরি করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কিবোর্ড’ নিজেই বুঝে ফেলবে গ্রাহক কী লিখতে চাইছেন। 

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য: ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’-এ ‘বেস্ট ইউজ অব ডেটা’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাবিপ্রবির ‘টিম অলিক’। নাসার কোনো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি টিম হিসেবে এ অর্জন এটাই প্রথম। বিশ্বের ৭৯টি দেশের বাছাই করা ২ হাজার ৭২৯টি টিমের সঙ্গে লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হয় ‘টিম অলিক’। প্রতিযোগিতায় পৃথিবী ও মহাকাশবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় ছয়টি ক্যাটাগরির মধ্যে ‘বেস্ট ইউজ অব ডেটা’ ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করে ‘টিম অলিক’। এই ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় বিশ্বের সর্বমোট ৭৯টি দেশ থেকে বাছাই করা ২ হাজার ৭২৯টি টিম। নাসা প্রদত্ত ডেটা ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি অ্যাপ ‘লুনার ভিআর’ তৈরি করতে বলা হয়। এতে শীর্ষ চারে স্থান করে নেয় ‘টিম অলিক’। ২০২০ এর ১৬ ফেব্রুয়ারি-পরবর্তী রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হয় ‘টিম অলিক’। এছাড়া টানা টানা তিন বছর প্রোগ্রামিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা, এসিএম আইসিপিসির ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল।

কর্মক্ষেত্রে সফলতা: শুধুমাত্র দেশে নয় বিশ্বজুড়েই শাবিপ্রবির স্নাতকরা কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করছেন। দেশের প্রায় সবগুলো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানতো বটেই গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজনেও আছেন শাবিপ্রবির স্নাতকরা। সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ মাইক্রোসফটে রয়েছেন সিএসই বিভাগের মারুফ মনিরুজ্জামান ও শাহাদাত হোসাইন। গুগলে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন সৈয়দ শাহরিয়ার মঞ্জুর, ফরহাদ আহমেদ প্রমুখ। বিখ্যাত ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনে কাজ করছেন শাবিপ্রবির সাবেক ছাত্র দিবাকর সামন্তসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া নাসায় কাজ করছেন পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক অমিত বিক্রম দেব।

এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে শিক্ষকতায়ও সুনাম অর্জন করেছে শাবিপ্রবিয়ানরা। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন সিএসই বিভাগের স্নাতক আলাউদ্দিন ভূইয়া। নর্থ ক্যারোলিনার উইন্সটন-সালেম স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন সিএসই বিভাগের প্রথম ব্যাচের মোহাম্মদ মুজতবা ফুয়াদ। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন দেবযানী দেব। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাবিপ্রবির সাবেক ছাত্র এম শাহরিয়ার হোসাইন।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে আছেন রসায়ন বিভাগের স্নাতক মুহম্মদ জহুরুল আলম সিদ্দিকী। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ব্রান্সউইকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন অর্থনীতি পঞ্চম ব্যাচের মুর্শেদ চৌধুরী। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন সিএসই বিভাগের স্নাতক খন্দকার ইন্তেনাম উনায়েছ আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হেভেনে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন সিএসই স্নাতক ইফতেখার ইবনে বাসিত। ইউনাইটেড আরব অ্যামিরেটস ইউনিভার্সিটিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন শাবিপ্রবির সাবেক ছাত্র রেজাউল চৌধুরী। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence