তিন ছাত্রকে মারধরের ৫ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাবিপ্রবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৩৫ AM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৮ AM
শিবির সন্দেহে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) তিন ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি এ ঘটনা তদন্তে কোনো কমিটিও গঠন করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন শনিবার (০৮ এপ্রিল) রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন প্রশাসন বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আর তিনি বর্তমানে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
মারধরের শিকার ওই তিন ছাত্র হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি দশম ব্যাচের ছাত্র আসাদুল ইসলাম (২৩), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল (ইইই) ১১তম ব্যাচের ছাত্র আজিজুল হক (২৪) এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের নবম ব্যাচের ছাত্র গোলাম রহমান (২৪)।
আরও পড়ুন: পাবিপ্রবির হলে আটকে তিন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ছাত্রলীগের
এদিকে, এই তিন ছাত্রের শিবির সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তাই প্রশ্ন এসব শিক্ষার্থীদের হলে আটকে রেখে কেন মারধর করা হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের একাংশ। আর এতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্যাম্পাসে নিজেদের অনিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) আনুমানিক রাত ১২টার দিকে ওই তিন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে থেকে শিবিরের বই ও নথিপত্রসহ আটক করা হয় বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পরে ছাত্রলীগ কর্মী আপেল, শেহজাদ, তোফিকসহ ১০-১২ জন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে তারা ছাত্রশিবিরের কর্মী কী না। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হলের তিনটি রুমে নিয়ে ওই তিন শিক্ষার্থীর ওপর ক্রিকেট স্টাম্প, রড, হকিস্টিক, প্লাসসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
আরও পড়ুন: পাবিপ্রবির সেই ৩ শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ
মারধরের শিকার আসাদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দাড়ি-টুপি থাকায় আমাদের বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন। পরে আমাদের হলে নিয়ে গিয়ে তিন রুমে তিনজনকে নির্যাতন করা হয়। আমরা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের অপরাধ আমরা নামাজ-রোজা করি, দাড়ি-টুপি আছে। এ জন্য জোর করেই আমাদের শিবিরকর্মী বানিয়েছে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ওমর ফারুক মীর বলেন, আমরা হলে গিয়ে মারপিট দেখিনি। তিন ছাত্রকে আটকে কিছু একটা লিখানো হচ্ছিল। পরে তাঁদের পুলিশের সোপর্দ করেছি। আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামাল হোসেন বলেন, এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মারধরের শিকার ছাত্ররাও কোনো অভিযোগ দেননি। এর ফলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে অভিযোগ দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন বলেন, হলে তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের খবর আমরা সেদিনই পেয়েছি। কিন্তু ওই তিন শিক্ষার্থীকে আসলে কারা পিটিয়েছে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। আর কোনো পক্ষ থেকেই এখনো কোনো ধরনের অভিযোগ করা হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।