একক ভর্তি পরীক্ষা: ইউজিসির সুপারিশ যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:২১ PM , আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৪ PM
আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার বিষয়ে দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে এ সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়া, কমিটি গঠন, কমিটির আকার, আর্থিক বিষয়াবলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ জানানো হয়েছে। ইউজিসির এসব সুপারিশ বর্তমানে যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে তারা খসড়া প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে একটি বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুপারিশগুলো রাষ্ট্রপতি ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে এ নিয়ে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হতে পারে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন খসড়ায় একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকবে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে থাকতে পারে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত এবং বিধান। এছাড়াও যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকে না—খসড়ায় সিদ্ধান্ত আসবে তাদের বিষয়েও। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বয়সসীমার শর্ত তুলে দেওয়ার পক্ষে; এক্ষেত্রেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে অধ্যাদেশ জারির পর—জানিয়েছে ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট কমিটির একাধিক সদস্য।
একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর এ নিয়ে প্রস্তাবনার খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। এই অধ্যাদেশ জারি হলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তি পরীক্ষায় আসা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।
ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের আগ পর্যন্ত ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যাই থাকুক না কেন; এই অধ্যাদেশ তার উপরে প্রাধান্য পাবে। কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটিকে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন এ সুপারিশের ফলে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা একক একটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে পারবেন। তবে এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে অধ্যাদেশ জারির পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
একক ভর্তি নীতিমালার ফলে বুয়েট, ঢাবি, জাবি, রাবি এবং বাকৃবির মতো বড় উচ্চশিক্ষালয়গুলোও আসবে একক ভর্তি পরীক্ষায়। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও নীতিমালার অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সুযোগ পেত।
আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) মো. আবু ইউসুফ মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, জাতীয় পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ (এনটিএ) গঠনের নির্দেশনা জারির পর ইউজিসি একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে একটি বৈঠক করব; এরপর এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের কার্যালয়ে পাঠাব। তারপর সেখান থেকে এ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।