শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বদলি হওয়া সেই অধ্যক্ষ হলেন মাউশির নতুন ডিজি

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক  © সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১০ নভেম্বর অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এহতেশামুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগে আন্দোলনে নামেন বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের দেয়া এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম পেরোনোর আগেই ১৪ নভেম্বর এই অধ্যক্ষকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক পদে বদলি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নতুন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) হিসেবে পদায়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

কলেজটির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগের ভোল পাল্টিয়ে এন্ট্রি আওয়ামী লীগ সাজার চেষ্টা করেন এই ক্যাডার কর্মকর্তা। বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অনুচর হিসেবে পরিচিত হওয়া অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহার হন। কিন্তু বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে মাউশির নতুন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) হিসেবে পদায়ন করা স্বৈরাচারের পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, বরিশালের সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০২১ সালের জুন মাস থেকে প্রফেসর ড. মো. এহতেসাম উল হক কর্মরত ছিলেন।এর আগে তিনি বরিশাল বিএম কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ‘শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে পদায়ন পেলেও তাকে বদলি করা হয়েছে শুধু আওয়ামী লীগের আমলে পদায়ন পাওয়ায়। অথচ মাউশির ডিজির মত পদে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং পাঁচ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ পদ থেকে প্রত্যাহার হওয়া ব্যক্তি কীভাবে পদায়ন পান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা শিক্ষা ক্যাডারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পদায়ন বা বদলির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্বের সাথে দেখছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাউশির নতুন ডিজি মো. এহতেসাম উল হকের বিষয়টি ভিন্নতর। তিনি আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন। আন্দোলন পরবর্তী তার বিরুদ্ধে হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সেটিরই প্রমাণ। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন ব্যক্তকে মাউশির ডিজি পাদে নিযুক্ত করায় অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কীভাবে মাউশির ডিজি পদে আওয়ামী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার হওয়া ব্যক্তি পদায়ন পান তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।’

তবে বিষয়গুলো অস্বীকার করে ড. মো. এহতেসাম উল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদটি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সমমান। কিন্তু আমি প্রফেসর হওয়া স্বত্বেও বিএম কলেজ থেকে সেখানে বদলি করা হয়েছিল। যেটা আমার জন্য অপমানজনক ছিল। এছাড়া ওখানকার শিক্ষকরাও আমাকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। এজন্য ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর টাকা দিয়েছি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করিয়েছে তারা। 

তিনি আরও বলেন, গত সরকারের সময় পদবঞ্চিত ছিলাম। এজন্য লবিং-তদবির করেও কোথাও আসতে পারিনি। তাই যথাযথ মূল্যায়ন পাননি বলে অভিযোগ করে শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা।


সর্বশেষ সংবাদ