মাউশির ফোসেপ প্রকল্পের বেহাল দশা, ফের মেয়াদ বাড়াতে তোড়জোড়
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪২ PM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৬ PM
১৭৬টি একাডেমিক ভবনের মধ্যে তৈরি হয়েছে ৭১টি। যদিও তৈরিকৃত অধিকাংশ ভবনে লিফট সংযোজন হয়নি। বিজ্ঞান শিক্ষকের ৮ হাজার ৬২৫টি পদও সৃজন হয়নি। এমনকি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ১০টি নতুন বিষয় চালুর কথা থাকলেও সেটিও করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অথচ চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এমন বেহাল দশা ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ (ফোসেপ) প্রকল্পের। এরই মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্নের অজুহাতে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন ফোসেপ প্রকল্পের দায়িত্বরতরা।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। তবে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা। তৈরিকৃত ভবনগুলো হস্তান্তরের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে আরও ১৫টি একাডেমিক ভবন তৈরির কাজ শেষ হবে। এছাড়া অবশিষ্ট ভবনগুলো তৈরি করতে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।
‘৭১টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সবগুলো ভবনে লিফট বসানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া কয়েকটি হোস্টেল নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি ভবন নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে’—মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর
জানতে চাইলে ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক-১ শরফুদ্দিন মুহাম্মদ আবু ইউসুফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একাডেমিক ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। নকশা প্রণয়নসহ নানা কারণে এখনো ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করা যায়নি। তার দাবি, ইতোমধ্যে ৯৪টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৫১১ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৫৫০ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় দেশের ২০০টি সরকারি কলেজে ১৭৬টি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৫টি হোস্টেল, এক হাজার ৯১৪টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার সামগ্রী, বিজ্ঞান শেখার যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। এছাড়া হোস্টেলের জন্য ৪৫৫টি পদ সৃজনও অন্তর্ভুক্ত। তবে কোনো কাজই শতভাগ সম্পন্ন করতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
‘গত ১২ জানুয়ারি নতুন করে সাতটি বিল্ডিং তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সরকারের সব প্রকল্পের মেয়াদই ২০২৬ পর্যন্ত’—মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, উপসচিব (উন্নয়ন-২) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ফোসেপ প্রকল্পের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। অনিয়মের কারণে প্রথম প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নুরুল হুদাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত সাড়ে ৬ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। যদিও অর্ধেকের বেশি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করতে পারেনি তারা। ফলে কাজের অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। যদিও ১১তম পিএসসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের সব কাজ সমাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের বিষয়টি আর বিবেচনা করা হবে না।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাউশির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে ফোসেপ প্রকল্পের হস্তান্তর করা ভবনের সংখ্যা ছিল ৫৪টি। ৬ মাস পর ৭১টি ভবন তৈরির দাবি করা হয়েছে। শুধু বিল্ডিং তুললেই একাডেমিক ভবন হয়ে যায় না। ক্লাসের সরাঞ্জামাদিও দরকার হয়। সরেজমিনে অনুসন্ধান করলে প্রকল্পের নানা গড়মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পূর্বে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।’
ফোসেপ প্রকল্পের ভবনগুলো নির্মাণ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৭১টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সবগুলো ভবনে লিফট বসানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া কয়েকটি হোস্টেল নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি ভবন নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে।’
ফোসেপ প্রকল্পের একটি একাডেমিক ভবন
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগেরে উপসচিব (উন্নয়ন-২) মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গত ১২ জানুয়ারি নতুন করে সাতটি বিল্ডিং তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সরকারের সব প্রকল্পের মেয়াদই ২০২৬ পর্যন্ত।’
১১তম পিএসসি সভায় প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এরপরও কেন আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। যে উদ্দেশে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল সেটিও বাস্তবায়ন হবে না। তবে মেয়াদ বৃদ্ধির সময় সংশ্লিষ্টদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কঠোর বার্তা দেওয়া হবে।’