ঢাবিতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব থেকে বাদ যায়নি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও (ঢাবি)। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে বেডে পড়ে আছেন। তিনি প্রথমে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে রক্ত পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার রক্তের প্লাটিলেট দিনদিন কমে যাচ্ছে বলে বলে জানান তিনি।

একই হলের আরেক শিক্ষার্থী সবুজ হাসানও বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। আজ শনিবার রক্ত পরীক্ষা করলে তারও ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলাম। শনিবার রক্ত পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। তাই ক্লাস থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে চলে যেতে হচ্ছে।

বিভিন্ন হলে খবর নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। হলের বিরূপ পরিবেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী যারা গণরুমে থাকেন তারাই বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুত্তাকী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন। আমাদের মেডিকেলের ওয়ার্ডে আসলেই দেখবেন কি হারে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছেন।’

এই বছর কতজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে জানতে চাইলে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমাদের কাছে এর নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে প্রতিদিন ৪-৫জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন সেখানে।’

এদিকে হলে হলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও মশক নিধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শরিফুল ইসলাম নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গণরুমে আমাদের কয়েকজন বন্ধু ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’

সাজ্জাদ হোসেন নামে সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝে ধোঁয়া দেয়া হলেও মশা মরে না। কিন্তু সপ্তাহ খানিক ধরে সেটাও দেয়া হচ্ছে না। তিনি মশা মারার কার্যকরী ওষুধ দেয়ার জন্য জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

তবে ডেঙ্গুর ব্যাপারে প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা। প্রাধ্যক্ষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হল প্রশাসন ডেঙ্গুর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। তবে তারা শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, হলে যাতে ডেঙ্গু মশা বিস্তার লাভ করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরেও যদি কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয় তাহলে হল প্রশাসন তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা দেবে।

উল্লেখ্য, ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে চলতি মাসের প্রথম ১৭দিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৮১জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫জনের। তবে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় সংশ্লিষ্টরা।

চিকিৎসকরা জানান, এবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি। জ্বরের মাত্রা কম, দৃশ্যমান র্যাশ বা দাগ না হওয়া এমনকি শরীরে পর্যাপ্ত ব্যাথা না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারছেন না যে, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কিনা। চিকিৎসাবিদরা আরো জানান, এবার সংক্রমণের হার যেমন বেশি, মৃতের হারও বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ