ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় মামলা
ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় মামলা  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলাটি ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় রুজু করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। এ সময় তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

এজাহার অনুযায়ী, রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর এবং হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভবনের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন লাগানো হয়।

মামলার নথিতে বলা হয়, হামলার ফলে ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের লকারে রাখা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ব্যাপক ক্ষতি করা হয়।

আরও পড়ুন: এনসিপির নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় সন্দেহভাজন যুবশক্তির নেত্রী আটক

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে দ্য ডেইলি স্টার ভবনের মোট ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। যাচাই-বাছাই শেষে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত সব নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় বলা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসীদের এই হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকাটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে পত্রিকাটির অনলাইন কার্যক্রমও টানা ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার নথিতে দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলার পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ তাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাশৈণ্যু মারমা মামলাটি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!