খাগড়াছড়িতে অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৩, মেজরসহ সেনা-পুলিশের ১৬ সদস্য আহত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৫ PM , আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫ PM
খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই সংর্ঘষ হয়েছে। সংর্ঘষের এক পর্যায়ে একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়। জুম্ম-ছাত্র জনতার ব্যানারে অবরোধ চলাকালে গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানীসহ ১৬ সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে গুইমারার রামেসু বাজারে এ সংর্ঘষের সুত্রপাত ঘটে । অবরোধকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়ক অবরোধ করলে সেই অবরোধে বাধা দিলে সংঘর্ষ ব্যপক আকার ধারণ করেন।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা খাগড়াছড়ি জেলা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতা পূর্ণ দিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এবং দুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন অবরোধের সমর্থনকারীরা। খবর পেয়ে সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানীসহ সেনাসদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। এ নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে সেনাসদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেনাসদস্যদের ওপর হামলা ঘটনা ঘটে। তখন অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ১৬ সেনাসদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৪ জন আহত হন।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক আহসান হাবিব পলাশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে পুলিশ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল থেকেও কেউ পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্তের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের ই-প্রত্যয়নপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি দিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। এই অবরোধ কর্মসূচি পালনে ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ উসকানি ছিল বলে জানা গেছে। রবিবার সকাল ১০টায় সেনাবাহিনীর টহল দল গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ সরানোর সময় ৫০-৬০ জন সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পরে আনুমানিক ২০০-৩০০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর হামলা করে। এতে সেনাবাহিনীর গুইমারা জনের টুআইসিসহ ১৬ জন সেনা সদস্য আহত হন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো.এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায় এবং বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। সেখানে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকানমালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে। এর আগে গুইমারায় ১৪৪ ধারা মধ্যেই সড়ক অবরোধ করে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। তখন অবরোধকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে সংর্ঘষের সূত্রপাত ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাইকিং করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে উশৃঙ্খল জনতা সরে না যাওয়ায় তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সেনাবাহিনী লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে বাঙালি ও পাহাড়ি উভয়ের মধ্যেই সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং গুইমারার রামসু বাজারে এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘সড়ক অবরোধ করা নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছে। এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
খাগড়াছড়ির গুইমারায় অবরোধের কারণে আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাজেক ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে সব পর্যটককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে তারা সবাই খাগড়াছড়ি সদরে অবস্থান করছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে সবাইকে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এই আদেশে বলা হয়, যেহেতু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে, তাই বেলা দুইটা থেকে আগামী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা আদেশ জারি থাকবে।