শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্র কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব

প্রতিকী ছবি
প্রতিকী ছবি  © সংগৃহীত

দিনকে দিন কিশোর গ্যাংয়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে বরগুনা। একসময় বই-খাতাই ছিল যাদের সঙ্গী, আজ তারাই সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্কের নাম। অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই এসব গ্যাংয়ের মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে। সর্বত্র চলছে তাাদের তাণ্ডব। 

শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ঘটছে মারামারি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন কিংবা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার মতো ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াও যেন তাদের কাছে বিনোদনের অংশ। দিনের আলোয় প্রকাশ্য সংঘর্ষ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।

এদের হাতে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক। সামান্য টাকার বিনিময়ে তারা মাদকের জগতে ঢুকে পড়ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবও তাদের অপরাধকে বীরত্ব হিসেবে দেখাতে উসকে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারিবারিক বন্ধনের ভাঙন ও সামাজিক সংকটই কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ।

সম্প্রতি আলোচনায় আসে বরগুনা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তোফাকে মারধরের ঘটনা। ফেসবুকে মন্তব্য করায় তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরিত্যক্ত ভবনে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আরও লজ্জাজনকভাবে তাকে থুথু মাটি থেকে জিভ দিয়ে তুলতে বাধ্য করা হয়। পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

উপজেলা খেলার মাঠ, কলেজপাড়া, বাজার এলাকা— কোথাওই নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ। বরগুনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, টিউশনিতে যাতায়াত বা বিকেলে হাঁটার সময়ও তারা হয়রানির শিকার হন। প্রতিবাদ করলে গ্যাংয়ের টার্গেটে পড়তে হয়। এমনকি সন্ধ্যার পর নির্জন রাস্তায় পরিবারের সদস্যরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে এ অপরাধ। ফলে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা এখন সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। দুপুরে রাস্তায় বের হলেও আতঙ্ক কাজ করে, হঠাৎ কিশোর গ্যাং ঘিরে ধরবে।’

আরও পড়ুন: হিট প্রকল্প ব্লাইন্ড রিভিউ হবে, আমরা কখনই বলিনি: অধ্যাপক তানজীম

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল রহিমের অভিযোগ, ‘এই কিশোররা নিজেরা এত সাহসী নয়। মাদক ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা আর প্রভাবশালীরা তাদের উসকে দেয়, আশ্রয় দেয়। তাই তারা ভাবে, তাদের কিছুই হবে না।’

বরগুনা সরকারি কলেজসংলগ্ন মসজিদের ইমামের মতে, মোবাইল আসক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবে নৈতিক শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে কিশোররা।

সমাজবিদরা বলছেন, পরিবারে সন্তানকে সঠিক নজরদারিতে রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্যক্রম বাড়ানো এবং সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ পুনর্গঠনই হতে পারে সমাধান।

এদিকে বরগুনার পুলিশ সুপার ইব্রাহিম খলিল দাবি করেছেন, কিশোর অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে অনেক গ্যাং ভেঙে দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এদের নেপথ্যে যারা আছে, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— কেন প্রতিনিয়ত নতুন গ্যাং জন্ম নিচ্ছে? কেন তাদের দাপট দিনে-দুপুরেই এতটা বেপরোয়া? এর পেছনে কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া দায়ী নয়?


সর্বশেষ সংবাদ