থানা ব্যারাকেই নারী পুলিশকে ৬ মাস ধরে ধর্ষণের ঘটনায় যে ব্যাখ্যা দিল পুলিশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৯ PM , আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৫ PM
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ব্যারাকে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ৬ মাস ধরে ধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় ঢাকা জেলা পুলিশের। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পুরুষ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে নারী কনস্টেবলকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ ঢাকা জেলা পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
আরও বলা হয়, উল্লিখিত নারী ও পুরুষ কনস্টেবল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। গত ১৯ আগস্ট উক্ত নারী কনস্টেবল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ'র নিকট অভিযোগ করেন যে, অভিযুক্ত পুরুষ কনস্টেবল তাকে ৫ মাস যাবৎ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন এবং ঘটনাটি তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার ও সুশৃঙ্খল বাহিনী । পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। উল্লিখিত ঘটনায় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে, ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য ১৯ আগস্ট জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আশুলিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। এরপর সাফিউর নামের এক কনস্টেবল ‘পরিচিত হওয়ার’ কথা বলে তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। রমজানের ঈদের পর এক রাতে ব্যারাকে একা থাকাকালে সাফিউর তার কক্ষে ঢুকে জাপটে ধরে ধর্ষণ করেন এবং মুখ চেপে ধরে পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী তোলাকে কেন্দ্র করে হল সুপারকে দেখে নেওয়ার হুমকি ছাত্রদল নেতার
ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, ভিডিওর ভয় দেখিয়ে সাফিউর দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করে যান। সর্বশেষ ১৫ আগস্ট রাত ২টা ৩০ মিনিটে তিনি আবারও ধর্ষণের শিকার হন। এরপর রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে সাফিউর তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সেসময়ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চান তিনি।
নারী কনস্টেবল অভিযোগ করেন, বিয়ের কথা বললে বা শারীরিক সম্পর্কের বিরোধিতা করলে সাফিউর তাকে মারধর করতেন। সেই নির্যাতনের একাধিক ছবিও তার কাছে রয়েছে। ১৬ আগস্ট তিনি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইবনে ফরহাদকে বিষয়টি গোপনে জানালে তিনি ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেনকে জানিয়ে দেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওসি তদন্ত ও অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউরের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় শুরু থেকেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি জানান, ১৭ আগস্ট থানায় গিয়ে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে চাইলে ওসি আক্তার হোসেন বলেন, “আমরা চাকরি করি, কেউ অভিযোগ করলেই তো মামলা নিতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বললে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” ভুক্তভোগী বলেন, “আমি বললাম, একজন সাধারণ মানুষকেও তো বসিয়ে রেখে মামলা নেওয়া হয়, আমি একজন পুলিশ সদস্য হয়েও বিচার পাব না?”
ওসি এরপর তাকে আলামত নষ্ট হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করলেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে থানার মুন্সীর মাধ্যমে তাকে টাকার প্রলোভন দেখান বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। পরদিনই জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসি করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত সাফিউরকেও পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসাকে বলেন, আমাদের পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এটা প্রেমঘটিত কিনা কাউকে ফাঁসানো হচ্ছে কিনা সব দেখা হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তেই এ বিষয়ে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ওই নারী কনস্টেবল আমাদের কাছে অভিযোগ করার পরপরই আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।