আত্মহত্যার আগে প্রেমিকাকে জিতুর লেখা ৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে যা আছে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫২ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৭ PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিতু রায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমঘটিত কারণে নিজ বাড়ির সামনে আম গাছের ডালে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে তিন পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন তিনি।
‘আমার হাতের শেষ চিঠি তোমার জন্য’ শিরোনাম দিয়ে জিতু রায় লিখেছেন, তোমাকে কতটা ভালোবাসি এই চিঠি তার প্রমাণ। তোমার সাথে প্রথম কথা হয় ২০১৯ সালে, তুমি আমার জীবনে কাকতালীয়ভাবে এসএমএস করো এবং আমিও তোমার এসএমএসের রিপ্লাই দিয়েছিলাম, কিন্তু কখনো আমাদের মধ্যে দেখা হয়নি। দীর্ঘ কয়েক বছর পর তুমি আবার আমাকে নক করো। আমার সাথে দেখা করার জন্য অনক চেষ্টা করে।
অবশেষে আমাদর দুজনের দেখা হয় ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল রংপুরে। তখন তুমি রংপুরে অ্যাডমিশন কোচিং করতে আসছিলে। তুমি আমাকে তোমার প্রেম নিবেদন করেছিলে। আমারও তোমাকে ভালো লাগে, আমিও তোমাকে জীবন সঙ্গেী করার জন্য রাজি হয়ে মাই। তুমি আমাকে বলেছিলে, আমার জীবন থেকে তুমি কখনও যাবে না। ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমাদের মধ্যে অনেক কিছু হয়ে যায়।
এ দীর্ঘ চারটি বছরে অনেক স্মৃতি আছে। চিকলি ওয়াটার পার্কে, রংপুর চিড়িমাথানা, ঘাঘট জমিদার বাড়ি, বেগম রোকেয়ার বাড়ি, ভিন্নজগৎ, দেবীনগর, নীলসাগর, পঞ্চগড় হিমালয় পার্ক, এ জায়গার স্মৃতিতিগুলো আমি ভুলত পারছি না। নীলসাগর এবং ঘাঘটে যা করছিলে তুমি, তা ভোলার মতো না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আত্মহত্যা করব। তুমি হয়তো আমকে ছাড়া অনেক সুখে আছো।
জিতু রায় আরও লিখেছেন, তোমাকে আমি ছেড়ে যাইনি, তুমি গেছো। অনেকবার সম্পর্ক হয়, সেটা তুমি কখনও অস্বীকার করতে পারবে না। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলেও এ স্মৃতিগুলো আমাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। তবুও বাবা-মা এবং ছোট বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, এই পৃথিবীতে যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, তোমার জন্য আত্মহত্যা করব।
আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুর পরেও তোমাকে ভালোবেসে যাব’— তিন পৃষ্ঠার চিঠি লিখে চলে গেলেন বেরোবি শিক্ষার্থী
আমি জানি, আত্মহত্যা মহাপাপ কাজ। ঈশ্বরও আমাকে ক্ষমা করবে না। তবুও আমি এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই। তোমাকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু দিনশেষে তুমি প্রমাণ করে দিলে, তুমি আমার জীবনে সুখের জন্য আসোনি। আমার জীবনকে গলা টিপে হত্যা করার জন্য আসছিলে। তুমি আমার সাথে রিলেশনে জড়ালে, তার সাথে বিয়ে ঠিক করলে। তবুও তুমি আমাকে বুঝতে দিলে না। তোমার বিয়ে হচ্ছে অনেক কষ্টে জানতে পারি।
তারপরও তোমাকে বার বার অনুরোধ করেছিলাম, আমার জীবনটা ধ্বংস করে যেও না, তবুও তুমি বিয়ের তারিখ মিথ্যা বলে বিয়ে করে চলে গেলে। তোমার শেষ কথা ছিল আমাকে ভুলে যাও, কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারলাম না। তোমাকে মৃত্যুর পরও ভালোবেসে যাব। তুমি আমার সাথে প্রতারণা করতে পারলেও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি।
সুইসাইড নোটের শেষে জিতু রায় লিখেছেন, ‘আজ আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী, শুধু তুমি। বাবা, মা এবং বোন আমাকে আপনার মাফ করে দিয়েন। আমি আপনাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। আপনাদের কষ্ট আরও বৃদ্ধি করে দিয়ে গেলাম। ... তুমি সুখে থাকো, আমার মৃত্যুর কথা শুনে তুমি অনেক খুশি হবে।’