১০ দিনের রিমান্ডে
বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর গড়ে ‘প্রতারক চক্র’, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ বাশারের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪০ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১০:০৫ AM
বিদেশে উচ্চশিক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান এম কে খায়রুল বাশার বাহারকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গুলশান থানায় গত ৪ মে মামলা দায়ের করে সংস্থাটি।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খায়রুল বাশার তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ ও ভিসা প্রক্রিয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে তারা।
পরে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির পক্ষ থেকে বাশারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানালে শুনানি শেষে আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে চটকদার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বহু শিক্ষার্থীর নামে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনই করা হয়নি। আবার অনেকে বিদেশে গিয়েও নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনিয়মের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ প্রবাসী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর বদলে ভুয়া অফার লেটার তৈরি করে তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। এসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘন করে।
আরও পড়ুন: গ্রেপ্তার হলেন ক্যামব্রিয়ানের লায়ন বাশার
সিআইডির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাদের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে বিভিন্ন থানায় শিক্ষার্থীরা প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেপ্তার খায়রুল বাশার ও তার পরিবারের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেন এবং সেখান থেকে অর্থ তুলে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা ও স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী রুমন আলী লস্কর। তিনি বলেন, “বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, স্কলারশিপ ও ভিসার নামে আমাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি কলেজে সেশন ফি পাঠানোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা তা না করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মতো ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রায় এক হাজারের বেশি। গড়ে প্রত্যেকের ২০ লাখ টাকা করে হিসাব করলে অন্তত ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা করা হয়েছে। বিএসবি গ্লোবালের দেওয়া তালিকায় ৮৫০ জন শিক্ষার্থীর তথ্য থাকলেও আমরা মনে করি প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।’
একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গত ২৭ আগস্ট বিএসবি চেয়ারম্যান বাশার ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্ট্যাম্প পেপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেখানে বলা হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২২ অক্টোবর ও ২৫ নভেম্বর—এই তিন কিস্তিতে পাওনা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু প্রথম কিস্তির দিনই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয় বাশার। বরং সেদিন শিক্ষার্থীদের ওপর তার গঠিত গুণ্ডাবাহিনী হামলা চালায়, যাতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় গুলশান থানাও অবগত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।