৩ বছর পর সন্ত্রাসবিরোধী মামলা থেকে মুক্তি পেলেন চবি শিক্ষার্থী জোবায়ের
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ০২:১৯ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০২:৫৮ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক প্রশাসনের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা থেকে দীর্ঘ ৩ বছর পর অব্যাহতি পেয়েছেন আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন সোহাগ। রবিবার (৪ মে) এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
স্ট্যাটাসে জোবায়ের লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু সমস্যা নিয়ে আমরা কয়েকজন সোচ্চার ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ অনলাইনে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে। অন্যায্য ভাড়া ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মারধরের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যান সাবেক সহকারী প্রক্টর হাসান মুহাম্মদ রোমান। দীর্ঘ দশ ঘণ্টা প্রক্টর অফিসে আটকে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
তিনি আরও লেখেন, ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ তিন মাস কারাবরণ ও রিমান্ডের নামে পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নভেম্বরের শেষ দিকে জামিনে মুক্তি পাই। পরে ক্যাম্পাসে হামলার কয়েকটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজনকে বহিষ্কার করে। এর মধ্যে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে আমাকেও ঢুকিয়ে দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ দেয়। ছাত্রলীগের বহিষ্কারাদেশ ৫-৬ মাসে তুলে নিলেও আমার বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখে। অবশেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শত-সহস্র শহীদ, আহত ও অকুতোভয় যোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারের দিন শেষ হল, আমি ফিরে পেলাম দ্বিতীয় জীবন।
এদিকে, জোবায়েরকে মানববন্ধন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সাবেক ওই সহকারী প্রক্টর হাসান মুহাম্মদ রোমানকে রবিবার সকালে চবির আইন অনুষদের একে খান অডিটোরিয়ামে ‘ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎ পুনঃকল্পনা’ শীর্ষক আইন বক্তৃতা-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের পাশে অংশ নিতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরে তার অব্যাহতির দাবিতে রাতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
জোবায়ের ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ আছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ড ও চব্বিশের গণহত্যাকে সমর্থন, ছাত্রদের নিজের বাসায় ডেকে মাদকের আসর বসানো এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত জীবন ও আইন বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা এবং ক্লাসের মধ্যে ছাত্রদের টার্গেট করে হেয় প্রতিপন্ন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাই হামলায় জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চাকরিচ্যুতির জোর দাবি জানিয়ে আসছি। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় আমরা ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো পদোন্নতিসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। তেমনি আজকে আইন অনুষদের সেমিনারে এই ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দেখে আমিও হতভম্ব। এমন অভিযুক্ত একজন শিক্ষক কীভাবে এ প্রোগ্রামে থাকতে পারেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি। প্রতিবার তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ'র সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।