না পড়েও ১ লাখ টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ০৯:৪২ AM , আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ০৯:৫২ AM
টাকা দিলেই কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিতো তারা। কোথাও ভর্তি না হয়েই মিলতো মূল সনদ। ১ থেকে ৩ লাখ টাকায় এসব সনদ মিলতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও এতে জড়িত। রাজধানীর লালবাগে অভিযান চালিয়ে সে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
লালবাগের একটি বাসায় এমন সনদ তৈরি করা হতো। শুক্রবার ভোরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চক্রের মূল হোতাদের। গোয়েন্দা পুলিশ এ অভিযান চালায়।
জানা গেছে, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ), রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ইবাইস ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট তৈরি চক্রের চারজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
এ সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হয় এবং সেগুলোকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু লোকের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সত্য পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ এ চক্রের অন্যতম প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে শুক্রবার সকালে লালবাগ থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, অনেকদিন ধরেই টাকার বিনিময়ে চলমান ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশনসহ বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি, হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রয় করে আসছিল একটি চক্র। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতাররা বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূলকাগজ দিয়েই মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রি করতো। এরপর সেগুলো কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করতো, যাতে করে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সত্যতা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী আজ সকালে লালবাগ থানার অন্তর্গত বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মীরি গলির একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় ওই বাসা থেকে দামি ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে সংগ্রহ করা ব্ল্যাংক মার্কশিট সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ভুঁইফোড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমোনিয়াল তৈরি করা হতো।
লালবাগ বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান, অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতার নুরুন্নাহার মিতু ছাড়া অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।