আরেকটি ধবলধোলাইয়ের সামনে বাংলাদেশ, এড়াতে পারবে কি
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৪ AM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫১ AM
সবশেষ সিরিজে ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে আবার ধবল ধোলাইয়ে আশঙ্কায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ হেরে গেছে বাংলাদেশ। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। খেলাটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
বাংলাদেশের দুশ্চিন্তাটা ব্যাটিং নিয়ে। আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ খেলবে আর মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি। এই সময়ের মধ্যে ব্যাটসম্যানরা ছন্দ খুঁজে না পেলে ‘বোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানরা ডোবান’ অবস্থা নিয়েই তাঁদের যেতে হবে বড় মঞ্চের লড়াইয়ে। চলতি বছরটাও বাংলাদেশের জন্য আসলে কাটছে তেমনই। বোলারদের পারফরম্যান্সের উল্টো দিকে ছুটেছেন ব্যাটসম্যানরা। পরিসংখ্যান অন্তত তেমনই বলছে।
২০২৫ সালে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে ওভারপ্রতি কম রান দেওয়ার গড়ে বাংলাদেশের বোলাররা আছেন চতুর্থ স্থানে। ২৬ ম্যাচে গড় ৭.৮৩। বাংলাদেশের ওপরে থাকা তিন দেশ আফগানিস্তান, ভারত ও জিম্বাবুয়ের বোলাররাও গড়ে ওভারপ্রতি সাড়ে সাতের ওপর রান দিয়েছেন।
এ বছর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে অন্তত ১০ ওভার বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমানই ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দিয়েছেন। বাকি বোলাররাও প্রয়োজনের সময় নিজেদের কাজটা করে দিচ্ছেন নিয়মিত। অথচ তাঁদের এমন পারফরম্যান্স ম্লান হয়ে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের আগে বাংলাদেশ চারটি সিরিজ জিতেছে ঠিকই, কিন্তু বৈশ্বিক মানদণ্ডে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল সাদামাটা।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা দলের তালিকায় বাংলাদেশের পরে আছে শুধু আফগানিস্তান। ২৬ ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করেছেন ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে আর ১২ ম্যাচ খেলা আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ১২৫.০১।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় জায়গা আসলে মিডল অর্ডার। এই জায়গায় ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে জাকের আলী, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন আর নুরুল হাসানকে। কিন্তু কেউই ভরসা হতে পারছেন না।
শুধু যে রান করতে পারছেন না, তা নয়। জাকের–তাওহিদরা উইকেটে এসে দৃষ্টিকটুভাবে ভুগছেন। অফ সাইডের বাইরের বলে তাঁদের দুর্বলতা এত দিনে জানা হয়ে গেছে সবারই। কিন্তু তা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা জাকেরকে তাই বাদ দেওয়া হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে। দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে ফিরে রান তো করতে পারেনইনি, ১৮ বলে ১৭ রানের ইনিংসের প্রতিটা বলই হতাশা বাড়িয়েছে তাঁকে নিয়ে। চট্টগ্রামে দর্শকদের কাছ থেকে তাঁকে শুনতে হয়েছে দুয়োধ্বনিও।
মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের হয়ে এ বছর সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন হৃদয়। ২০ ইনিংস ব্যাট করে ৪০৪ রানও করেছেন। কিন্তু হৃদয়ের রান তোলার গতি এ বছর টি–টোয়েন্টিতে অন্তত ১০ ইনিংস খেলেছেন, টেস্ট খেলুড়ে এমন দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে কম। মাত্র ১১০.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন হৃদয়।
মিডল অর্ডারে শামীম হোসেনেরও ভালো সময় যাচ্ছে না। এ বছর ২১ টি–টোয়েন্টি খেলে করেছেন ২৬১ রান। শেষ ৭ ইনিংসে শামীম তিনবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে, দুবার করেছেন ১ রান। প্রথম টি–টোয়েন্টির পর তাঁকে নিয়ে বিরক্ত অধিনায়ক লিটন দাস নাম ধরেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বড় মঞ্চে বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্প পুরোনো। এবার আরও একটি বড় টুর্নামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যাটসম্যানরা। অথচ টি–টোয়েন্টি অনেকের কাছেই এখন শুধু ব্যাটসম্যানদের খেলা। সেই সংস্করণের আরেকটি বিশ্বকাপ যখন সামনে, তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এই বিভাগ নিয়েই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ধবলধোলাই এড়ানোর ম্যাচেও যদি ব্যাটসম্যানরা দুঃসময়টা কাটিয়ে না উঠতে পারেন—নির্বাচকদের হয়তো বাধ্য হয়েই বিকল্পের সন্ধানে নামতে হবে।