লজ্জার রেকর্ড গড়ে হারল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ   © সংগৃহীত

এমন ব্যাটিং ধসও হয়! ১ উইকেটে ১০০ থেকে ৮ উইকেট হারিয়ে ১০৫ রান। ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারিয়ে অবিশ্বাস্য এক ধসের শিকার বাংলাদেশ। এতে লজ্জার রেকর্ড-ও গড়েছে টাইগাররা। ওয়ানডেতে এত কম রানে এর আগে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম উইকেট হারায়নি কোনো দল। আগের রেকর্ড ৮ রান। ২০২০ সালে নেপালের বিপক্ষে ২৩ থেকে ৩১—এই ৮ রানে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম উইকেট হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এরপর জাকের আলির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর অকল্পনীয় এক মঞ্চে পাড়ি জমিয়েছিল সফরকারীরা। তবে তার ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। শেষমেশ ৭৭ রানে হেরেছে টাইগাররা।

বুধবার (২ জুলাই) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯ দশমিক ২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ১৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক দল।

শ্রীলঙ্কার চ্যালেঞ্জিং পুঁজির জবাবে শুরুটা ভালোই করেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তবে ঠান্ডা মেজাজে উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ফলে, দুই অঙ্ক পেরিয়েই থামেন এই ওপেনার। ওয়ানডে অভিষেকে ১৬ বল মোকাবিলায় ৩ বাউন্ডারিতে ১৩ রান করেন ইমন। এতে দলীয় ২৯ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।

এরপর জুটি গড়েন তানজিদ তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের ৭১ রানের জুটি ভাঙে শান্তর রান-আউটে। ডিপ মিড-উইকেটে ঠেলে দুই রান নিতে গিয়ে ভুল করে বসেন শান্ত, ২ চারে ২৬ বলে ২৩ রান করে ফেরেন টপ-অর্ডার এই ব্যাটার।

শান্ত আউট হওয়ার পরই যেন বাংলাদেশকে মড়ক ধরে বসে। দ্রুতই সাজঘরের পথ ধরেন আরও তিন ব্যাটার। রানের খাতা খোলার আগেই হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন দাস।

দুই বল পরে সাজঘরে ফেরেন তামিমও। ৯ চার আর ১ ছক্কায় ৬১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার। এরপর কামিন্দু মেন্ডিসের বলে বোল্ড হন তাওহীদ হৃদয়। হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে মেহেদী হাসান মিরাজ-ও এলবিডব্লিউ ০ রানে। তাসকিনও রানের খাতা খুলতে পারেননি। 

শেষদিকে একাই লড়াই জিইয়ে রেখেছিলেন জাকের আলি অনিক। তবে তার হাফ-সেঞ্চুরির ছোঁয়া ইনিংসও বাংলাদেশের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি। শেষমেশ ৭৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। জাকের ব্যাট থেকে ৫১ রান এসেছে। 

এর আগে, টস হেরে বোলিংয়ে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বল হাতে দারুণ শুরু পান তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন তিনি। তার অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে থাকা বলটিতে পেস ও অতিরিক্ত বাউন্সে বিভ্রান্ত হন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। কাট করতে গিয়ে ব্যাটে ঠিকঠাক বল লাগাতে পারেননি, উইকেটকিপার লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন। ৮ বল খেলে ০ রানে ফেরেন তিনি।

তানজিমের পর জোড়া উইকেটের দেখা পান তাসকিন। এদিন শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত লাইন ও লেন্থে বল করে যাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ এই পেসার। সেই চাপেই জোড়া সাফল্য এসেছে। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ইনসাইড এজ হয়ে ভেঙে যায় মাদুস্কার স্ট্যাম্প। ১৩ বল খেলে মাত্র ৬ রান করে ফেরেন এই লঙ্কান ওপেনার।

তাসকিনের সাফল্যের পরের ওভারেই ১৪ রান হজম করেছিলেন তানজিম, এতে কিছুটা চাপমুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। তবে সেই আশা টিকতে দেননি তাসকিন। ফের লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন ডানহাতি এই পেসার। তাসকিনের বাউন্সি ডেলিভারিতে মিড-অফে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে সহজ ক্যাচ দেন কামিন্দু মেন্ডিস। কোনো রান না করেই ফিরতে হয় তাকে।

ধ্বংসস্তূপে দাঁড়ানো দলটির হাল ধরেন চারিথ আসালাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিস। সাবলীল ব্যাটিংয়ে স্কোরশিট সচল রাখেন তারা। তবে এই জুটি বড় হতে দেননি অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। ওয়ানডে অভিষেকে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার।

তার ঘূর্ণিতে পা ফেলে এলবিডব্লিউ হন কুশল। ৪৩ বলে ৪৫ রানে থামেন তিনি। এতে আসালাঙ্কার সঙ্গে তার ৭৭ বলে ৬০ রানের জুটিও ভেঙে যায়।

এরপরও বড় জুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিল লঙ্কানরা। তবে ইনিংসের ৩২তম ওভারে সেই জুটি ভাঙেন পার্টটাইম অফ-স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম বলে বাউন্ডারি হজমের পর নিজের চতুর্থ ডেলিভারিতে জানিথ লিয়ানাগেকে ফেরান তিনি। তানজিমের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ৪০ বলে ২৯ রান করে ফেরেন লিয়ানাগে। 

এরপর মিলান রথনায়েকেকে ২২ রানে তানজিম এবং হাসারাঙ্গাকেও ২২ রানেই সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন। একই ওভারে মাহিশ থিকশানাকেও (১) তুলে নেন এই পেসার।

তবে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝেই অনবদ্য এক সেঞ্চুরি তুলে নেন চারিথ আসালাঙ্কা। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১১৭ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান লঙ্কান দলপতি। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি এটি। ইনিংসের শেষ ওভারে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৬ চার আর ২ ছক্কায় ১২৩ বলে ১০৬ রানের ইনিংস সাজান আসালঙ্কা।

তাসকিন ৪৭ রানে ৪টি এবং ৪৫ রানে নেন ৩ উইকেট নেন তানজিম সাকিব।  

 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!