গিটার বাজিয়ে আর গান গাওয়া হবে না উক্য চিংয়ের
মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র উক্য চিং মারমা। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে স্কুলের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দগ্ধ হন তিনি। শরীরের শতভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা সব চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। উক্য চিং খুব ভালো গান গাইতে পারত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গিটার বাজিয়ে গান গাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিও শেয়ার করে অনেকে লিখেছেন গিটার বাজিয়ে আর গান গাওয়া হবে না উক্য চিংয়ের। ছোট্ট উক্য তুমি ভালো থেকো।
উক্য চিং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংলিশ মিডিয়াম শাখার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ৩ নম্বর বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা উসাইমং মারমা বাঙ্গালহালিয়া উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন।
ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমার সন্তানকে আমরা শহরে পাঠিয়েছিলাম বড় স্বপ্ন নিয়ে, অথচ লাশ হয়ে ফিরল। আমি চাই না, আর কোনো মা-বাবা এভাবে সন্তান হারাক। আমি নার্সারি থেকে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ছেলের পেছনে যে টাকা খরচ করেছি শুধু তাকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য। আমার ছেলের শখ ছিল সে ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হবে। টিভিতে বা মোবাইলে কোনো গাড়ি দেখলেই সে বলতে পারত গাড়ির নাম কী। কিন্তু আমি আমার ছেলের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
তিনি আরও বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে আইসিউ থেকে জেনারেলে নিয়ে আসা হয়েছে। ডাক্তাররা আমাকে জানাল যে আমার ছেলের শতভাগ পুড়ে গেছে। এখন একমাত্র আল্লাহ ভরসা। আমিও তখন ভগবান/ আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাজেডির মধ্যে বড় হয়েছে। বিগত দেড় বছর আগেও আমার ছেলেটা চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি ছিল। ওই সময় তার পেছনে যে টাকা খরচ করেছি সেটা এখনো শোধ করতে পারিনি।
উসাইমং মারমা আরও বলেন, একদিন আগেও ছেলেকে বলেছিলাম, বাবা তুমি ভালো হয়ে থেকো। আগামী মাসের ১৫ তারিখ আমি তোমার সাথে দেখা করতে যাব, তোমার যা যা লাগে সব কিনে দিব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমি আর তাকে দেখতে পেলাম না। নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছি না যে আমার ছেলে আর নেই, সব সময় মনে হচ্ছে ছেলে আমার পাশেই, সব স্মৃতি ভেসে উঠছে। আজ বুধবার (২৩ জুলাই) ছেলেকে দাহ করব।
উল্লেখ্য, সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।