বাংলার ম্যাথের চ্যাম্পিয়নশিপে লড়লেন ৬ শতাধিক ক্ষুদে গণিতবিদ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ PM , আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ PM
বাংলার ম্যাথ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৫ এর জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সারাদেশের ৬ শতাধিক ক্ষুদে গণিতবিদ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। বিকেলে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগীদের পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকরা।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। মধ্যাহ্নের বিরতির পর আড়াইটা থেকে এক ঘণ্টা চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে পুরস্কার বিতরণী পর্ব শুরু হয়। চ্যাম্পিয়নশিপে ভেন্যু পার্টনার ছিল সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। এতে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস।
বাংলার ম্যাথ জানিয়েছে, অনলাইন ইভেন্টের মাধ্যমে বাছাইয়ের পর জাতীয় পর্বের চ্যাম্পিয়নশিপে মোট ৬০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রতিযোগী ছিল ৪৫০ জন। এ ছাড়া ১০০টি টিমে আরও ৩০০ প্রতিযোগী এতে অংশ নিয়েছে। অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জুনিয়র, ইন্টারমিডিয়েট ও অ্যাডভান্সড লেভেলে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রতিযোগীরা জুনিয়র লেভেল, ২০১০-১২ সালে জন্ম নেওয়া প্রতিযোগীরা ইন্টারমিডিয়েট এবং ২০০৭-০৯ সালে জন্ম নেওয়া প্রতিযোগীরা অ্যাডভান্সড লেভেলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
প্রতিটি ক্যাটাগরিতে একাধিক টিম ও প্রতিযোগীকে চ্যাম্পিয়ন, ফার্স্ট রানার্স আপ ও সেকেন্ড রানার্স আপ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ক্যাটাগরি ভিত্তিতে তিনজন স্বতন্ত্র ও তিনটি টিম গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রতিযোগীদের মধ্যে জুনিয়র লেভেল গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন নওশাদ জামান, ইন্টারমিডিয়েট গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন প্রজেশ ভৌমিক ও অ্যাডভান্সড লেভেল গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তাহসিন ইসলাম। টিম হিসেবে জুনিয়র লেভেলে গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন টিম সিগমা কিউব, ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে থিংকার্স ট্রায়াঙ্গেল ও অ্যাডভান্সড লেভেলে গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দ্য আলজেব্রস। এ ছাড়া জামাল নজরুল ইসলাম মেমোরিয়াল বেস্ট টিম এওয়ার্ড পেয়েছে ‘সিগমা কিউব’। আর বেস্ট ফিমেল টিম হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে ‘এঙ্গেল আর্টিস্ট’।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর গণিতবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. জি আর আহমেদ জামাল, এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটির এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাইফুর রহমান বাকাউল, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রাজ্জাক এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ড. কে এম কবিরুল ইসলাম।
বাংলার ম্যাথের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব হোসেন বলেন, গণিতভীতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এই চ্যাম্পিয়নশিপ সাজিয়েছি। এই বিএমটিসি (বাংলার ম্যাথ টিম চ্যাম্পিয়নশিপ) পুরো দেশে সচল করার জন্য গিয়েছি। আমরা অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। বাচ্চারা গণিত নিয়ে কথা শোনার জন্য আসছে, তারা আগ্রহী। গণিতভীতির বিষয়টা যেন দূর হয়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ফলে এখন যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে কোথাও তেমন এগোনো যায় না, টিমওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই ‘টিম চ্যাম্পিয়নশিপ’।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহরিয়ার শুভ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ‘গণিত হোক আনন্দের’। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা এটা শুরু করি। পরে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট করেছি। বাংলার ম্যাথ থেকে আমরা ‘কম্পিটেন্সি এসেসমেন্ট টেস্ট’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি। এটি শীঘ্রই সবার জন্য উন্মুক্ত করব। আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ইনভলভ হবে।
স্বতন্ত্র জুনিয়র লেভেল ক্যাটাগরিতে গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচ্ছ্বসিত সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নওশাদ জামান। অনুভুক্তি ব্যক্ত করে নওশাদ জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ২০২৪ সালে প্রথম ম্যাথ অলিম্পিয়াড শুরু করেছিলাম। আজকে এ পুরস্কার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আমার এত খুশি লাগছে, আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি ৫ বছর বয়স থেকেই ইউসিমাস (ইউনিভার্সাল কনসেপ্ট মেন্টাল অব আরিথমেটিক সিস্টেম) করি। ওখান থেকে সেন্ট জোসেফে যাওয়ার পর আমি ম্যাথ অলিম্পিয়াডের কথা জানতে পারলাম। আস্তে আস্তে প্র্যাকটিস করে এই পর্যন্ত আসা।