জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির মন্তব্যের প্রতিবাদ ‘ঢাকা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ও ঢাকা সিটি কলেজ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ও ঢাকা সিটি কলেজ  © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হকের করা সংবাদ সম্মেলনকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেছেন, এটি একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অপচেষ্টা, যাদের উদ্দেশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংস্কার ও সিটি কলেজের নানাবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওঠা তদন্ত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা। গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এ সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মন্তব্যের বিরুদ্ধে ‘ঢাকা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কলেজের ‘অধ্যক্ষ’ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ঢাকা সিটি কলেজের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করিনি, অভিযোগ করেছি তার পিএস আমিনূল আক্তারের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ দাবি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির

প্রথমত: মূল অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টায় ভিসি বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন, যা হতাশাজনক। উল্টো শতভাগ স্বচ্ছতায় পরিচালিত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কলেজের দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিত করে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কলেজকে কলঙ্কিত করেছেন। এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

দ্বিতীয়ত: ভিসি আরও একটি জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন যে, ঢাকা সিটি কলেজের নিয়োগ বোর্ড ও গভর্নিং বডি কর্তৃক স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজি নেয়ামুল হক একজনই মাত্র প্রার্থী ছিলেন যা নিতান্তই সত্যের অপলাপ। এই নিয়োগ পরীক্ষাতে মোট ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। তন্মধ্যে ৬ জন যোগ্য প্রার্থী মাউশির সর্বশেষ বিধি মোতাবেক মোট ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। যার ন্যূনতম পাস মার্ক ৪০% হওয়ায় ৫ জন প্রার্থী অকৃতকার্য হয়। কিন্তু অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক ৪৬.২৫% নম্বর পেয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় শুধুমাত্র তিনি মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে রিক্রুটিং বোর্ডের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে গভর্নিং বডি কর্তৃক স্থায়ী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এমতাবস্থায় এই জঘন্য মিথ্যাচারকে ভিসি কীভাবে প্রচার করতে পারেন? ওই নিয়োগ বোর্ডের একজন সম্মানিত সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি-২ প্রফেসর ড. নূরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রয়োজনে তার সীল স্বাক্ষরসহ প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।

তৃতীয়ত: ঢাকা সিটি কলেজের সুযোগ্য গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও বটে তার সুযোগ্য ও ১০০% স্বচ্ছ পরিচালনায় সিটি কলেজ সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে। তার পক্ষ থেকে পরিচালনা পর্ষদের সততার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার জন্য ভিসিকে এর প্রমাণ দিতে হবে। ষড়যন্ত্র করে ভিসি মহোদয় হঠাৎ করে অন্যায়ভাবে সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করে জনৈক সাব্বির সাহেব ও মিজানুর রহমানকে মনোনয়ন দেন। যার ফলে ঢাকা সিটি কলেজ এই অন্যায় আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ৭ জুলাই রিট জারি হয়। এই রিটের স্টে অর্ডারের ফলে আমাদের পূর্বের গভর্নিং বডি পুনর্বহাল আছে। কিন্তু তথাকথিত সাব্বির সাহেব ও মিজানুররা ১ জুলাই ঢাকা সিটি কলেজে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করে কলেজের গেট ভেঙ্গে সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। যার ফলে ৭ জুলাই তাদের নাম মামলায় সমন জারি হয়েছে। তারা সমনভুক্ত আসামি।

আরও পড়ুন: ঢাকা সিটি কলেজে অনিয়ম তদন্তে বাধা দিতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ সম্মেলন

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, আমি কাজি নেয়ামুল হক জুলাই ৩৬ আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা, গত ২ আগস্ট প্রথম বাংলাদেশে খুনি হাসিনার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করি এলিফ্যান্ট রোড থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে যার ভিডিও যমুনা টিভির মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়। এই জুলাই আন্দোলনের বেনিফিশিয়ারি হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হন প্রফেসর ড. আমানুল্লাহ। ভিসি হওয়ার পর উনার একটা চক্র ভিসির পিএস আমিনুল আক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার মিজানুররা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সিন্ডিকেটে পরিণত করেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে, সামনে আরেক ৫ আগস্ট আসন্ন। শিক্ষা উপদেষ্টা ও ইউজিসির কাছে আবেদন এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। 

‘‘দ্রুত আমার বৈধ স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের পূর্বানুমতি না দিলে আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা দ্রুত একটি জাতীয় সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম, স্বৈরাচারী মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ উপস্থান করবো।’’


সর্বশেষ সংবাদ