কুয়াকাটায় নিম্নমানের সড়ক নির্মাণ, প্রতিবাদে ‘প্রতীকী জানাজা’

নিম্নমানের সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদে প্রতীকী জানাজা
নিম্নমানের সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদে প্রতীকী জানাজা  © টিডিসি

পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় নিম্নমানের সড়ক নির্মাণের অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে স্থানীয়রা। আর সে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এবার সামনে এসেছে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ—‘প্রতীকী জানাজা’।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) শেষ বিকেলে জিরোপয়েন্ট থেকে লেম্বুর বন পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কের কার্পেটিং কাজে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেন।

শিক্ষার্থীরা সড়কের ওপর কাফনের কাপড় বিছিয়ে ‘সড়কের অকাল মৃত্যু’ ঘোষণা করে জানাজা পড়েন। পরে ‘সড়কের আত্মার মাগফেরাত’ কামনায় দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনাটি মুহূর্তেই স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বহু অংশে খোয়া ঢালাই অসমান, বিটুমিন কম থাকায় কার্পেটিং ঠিকমতো বসছে না। কোথাও হাত দিলেই উঠে আসছে নতুন ঢালাই। স্থানীয়দের দাবি, মাটি বাদ দিয়ে বালু ব্যবহার, লবণাক্ত বালু তোলা, কম খোয়া ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে সড়কটি।

এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ‘ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী চলতি মাসের ২৫ তারিখ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ বাকি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের মাঝি বলেন, ‘আগে রাস্তা ভালোই ছিল। এখন আধা ইঞ্চি ঢালাই দিচ্ছে। এমন মানহীন রাস্তা আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

জেলে জাকির হোসেন বলেন, ‘এই বেড়িবাঁধই আমাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচায়। এখানে অনিয়ম হলে আমাদের কোনো আশ্রয় থাকবে না।’

রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘লোকজন হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে দেখাচ্ছিল। এমন পর্যটন এলাকায় এ ধরনের অনিয়ম লজ্জাজনক।’

অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার জসিম মৃধা দাবি করেন, ‘৪০ মিলি কার্পেটিং দরকার হলেও আমাকে ২৫ মিলি দেওয়া হয়েছে। মিষ্টি পানির অভাব, দূর থেকে বালু আনাসহ নানা বাধা আছে। তবু আমরা ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করছি।’

এ বিষয়ে এলজিইডির পটুয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসাইন আলী মীর বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে পরিদর্শনে গেছি। কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। ঠিকাদারকে নিয়ম মেনে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয়দের প্রশ্ন—নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বেড়িবাঁধ সড়ক কি অনিয়মের দায়ে অবশেষে আরও বিপদ ডেকে আনবে? শিক্ষার্থীদের প্রতীকী জানাজা যেন সেই প্রশ্নই দেশবাসীর সামনে নতুন করে তুলে ধরল।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, সমুদ্রলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বেড়িবাঁধ সড়কে এভাবে নিম্নমানের কাজ চলতে থাকলে বর্ষা ও জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে পারে পুরো এলাকা। শিক্ষার্থীদের ‘প্রতীকী জানাজা’ যেন সেই শঙ্কাকেই আরও জোরালোভাবে সামনে তুলে ধরল।


সর্বশেষ সংবাদ