৪ মাত্রায় দুলবে, ফাটবে ৫-এ, ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে কোন মাত্রা কতটা ধ্বংসাত্মক?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ PM , আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ PM
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত নরসিংদী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শত মানুষ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হওয়া এ ভূমিকম্পকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহন বলা হচ্ছে। নরসিংদীর মাধবদীতে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭।
২৪ ঘণ্টা পার না হতেই একই এলাকায় ফের ৩ দশমিক ৩ মাত্রা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০ টা ৩৬ মিনিটে এ কম্পন রেকর্ড করা হয়। এরপরই ভূমিকম্পের মাত্রা ও তীব্রতা নিয়ে জানতে চাইছেন মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্যের আলোকে জেনে নিই বিস্তারিত।
ভূমিকম্পের মাত্রা (Magnitude) কী
ম্যাগ্নিটিউড হলো ভূমিকম্পের আসল শক্তি বা মাটির নিচে কত বড় শক্তি বের হয়েছে—তার মাপকাঠি। এটার মান একটাই হয়। যেমন- ৫.২ বা ৬.৮ বা ৭.৫।
কী দিয়ে মাপা হয়?
১. রিখটার স্কেল (পুরোনো, কিন্তু এখনো জনপ্রিয় নাম)।
২. মোমেন্ট ম্যাগ্নিটিউড স্কেল বা এমডাব্লিউ (বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে ব্যবহারযোগ্য)।
সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবে?
৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলে টেবিল-চেয়ার দুলবে। ৫ মাত্রার হলে ঘর ফাটতে পারে। ৬ মাত্রার হলে পুরোনো ভবন ভেঙে পড়তে পারে। ৭ মাত্রার হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। আর ৮ মাত্রা হবে ধ্বংসাত্মক।
ভূমিকম্পের তীব্রতা (Intensity) কী
ইনটেনসিটি হলো মানুষ কী অনুভব করল, বাড়িঘরে কী ক্ষতি হলো বা রাস্তা কেমন কাঁপল—এগুলোর ভিত্তিতে দেয়া মান। একই ভূমিকম্পে দেশভেদে বা শহরভেদে তীব্রতা আলাদা হতে পারে।
কী দিয়ে মাপা হয়?
Modified Mercalli Intensity Scale (MMI)। স্কেল: I থেকে XII (রোমান সংখ্যায়)।
সাধারণ মানুষ কী বুঝবে?
MMI II হলে হালকা কম্পন, সবায় টের পায় না। MMI IV -তে জানালা কাঁপে। MMI VI হলে ফাটল দেখা যায়। MMI VII হলে দুর্বল ভবন ভেঙে পড়ে। MMI VIII–XII হলে বড়সড় ধ্বংস, সেতু-রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের নেপথ্যে ৩ প্লেট ও ৬ ফল্ট, ঝুঁকিতে ঢাকাসহ যে ২৪ জেলা
কেন ম্যাগ্নিটিউড আর ইনটেনসিটি আলাদা?
ম্যাগ্নিটিউড আর ইনটেনসিটি আলাদা হওয়ার কারণ হলো- ম্যাগ্নিটিউড হলো ভূকম্পের মূল শক্তি। আর ইনটেনসিটি হলো আমরা কীভাবে সেটা অনুভব করলাম। এর উদাহরণ হলো একই ভূমিকম্পে ঢাকা হয়তো MMI VI অনুভব করল, চট্টগ্রাম পেল MMI IV। কিন্তু দুই জায়গার ম্যাগ্নিটিউড একটাই— হতে পারে ৫.৬।
ভূমিকম্প কতটা বাড়ে? (লগ স্কেল)
ভূমিকম্পের মাত্রা স্কেলটি লগারিদমিক। অর্থাৎ প্রতি ১ মাত্রা বাড়লে ভূমিকম্পের শক্তি সামান্য নয়, বরং প্রায় ৩২ গুণ বেড়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ৪ মাত্রার চেয়ে দশ গুণ বেশি শক্তিশালী। ৬.০ মাত্রার তুলনায় ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্প শক্তিতে ৩২ গুণ বেশি। আবার ৮.০ মাত্রা ৬.০-এর চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। তাই সংখ্যায় এক ধাপ বৃদ্ধি দেখালেও বাস্তবে ধ্বংসক্ষমতা অনেক বেশি হয়।
ভূমিকম্পের গভীরতা (Depth)
ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এইটাও গুরুত্বপূর্ণ। ০ থেকে ৭০ কিলোমিটার অগভীর (সবচেয়ে বেশি ক্ষতি) হয়। ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার মধ্যম ক্ষতির আর ৩০০ কিলোমিটারের বেশি গভীর ভূমিকম্প। অগভীর কম্পনেই সাধারণত ভবন ধসে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।