ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে টিকিট যেন ‘সোনার হরিণ’, ট্রেন বাড়বে কবে?

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন  © টিডিসি সম্পাদিত

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে পর্যটন মৌসুম। ইতিমধ্যে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার পর্যটক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে নিরাপত্তা ও আরামের কারণে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ট্রেন। কিন্তু মাত্র দুটি ট্রেন ঢাকা থেকে যাতায়াত করায় টিকিট যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। অথব চাহিদা থাকলেও এ রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি দীর্ঘদিনেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপরই থেকেই বিপুল যাত্রী চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যা নিয়ে। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে চলছে মাত্র দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’। দীর্ঘপথের যাত্রীদের জন্য এ দুই ট্রেনই একমাত্র ভরসা। 

রেলপথটি চালুর সময় রেলমন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, অচিরেই আরও ট্রেন যুক্ত করা হবে। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট থেকেও সরাসরি ট্রেন চালু করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় বছর পার হলেও সে প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মাত্র দুটি লোকাল ট্রেন চালু রয়েছে, যা স্থানীয় যাত্রীদের চাহিদাও মেটাতে পারছে না। 

২০২৩ সালে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপরই থেকেই বিপুল যাত্রী চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যা নিয়ে। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে চলছে মাত্র দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন, ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’। দীর্ঘপথের যাত্রীদের জন্য এ দুই ট্রেনই একমাত্র ভরসা। 

এর ফলে কক্সবাজারগামী যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে মারাত্মক টিকিট সংকটে। তারা বলছেন, এ রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালে যাত্রীরা আরও স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে রেলওয়ের মোটা অংকের আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। আর পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে।

রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বিক্রয় প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়, ঢাকা-কক্সবাজার রুটের টিকিট পাওয়া যেন ‘শোনার হরিণ’। ১০ দিন আগে টিকিট না কাটলে পাওয়া যায় না সিট। মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় সব টিকিট। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে রেলওয়ে কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তৌহিদ নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি চলতি মাসেই গ্রুপ ট্যুরে কক্সবাজার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১০ দিন আগেই টিকিট কাটার সুযোগ থাকায় আরও আগে থেকে অ্যাপে নজর রাখছিলেন। এ সময় দেখতে পান, কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট প্রায় প্রতিদিনই এক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। আর পর্যটক এক্সপ্রেস সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা কিংবা ২০ মিনিট থাকে। অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটি বাদে অন্য দিনগুলোয় কিছুটা বেশি সময় টিকিট পাওয়া যায়। এ রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তার।

ঢাকা-কক্সবাজার রুটের জনপ্রিয় দুই ট্রেনের ১৫ নভেম্বরের অগ্রিম সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে

টিকিট সংকটের সুযোগ নিচ্ছে একটি অসাধু চক্রও। অনেকে অভিযোগ করেছেন, টিকিট বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। অথচ পরে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ বা দালালের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় সে টিকিট। যাত্রীরা বলছেন, ‘ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ ও আরামদায়ক, কিন্তু টিকিট পাওয়া এখন ভাগ্যের ব্যাপার। রেলওয়ে যদি দ্রুত ট্রেন সংখ্যা না বাড়ায়, পর্যটন মৌসুমে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’

আরও পড়ুন: ট্রাস্টি বোর্ডে একই পরিবারের ৫ জনের বেশি সদস্য নয়

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারগামী রেলপথ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রুটে পরিণত হয়েছে। তাই যাত্রীচাপ সামাল দিতে দ্রুত অতিরিক্ত ট্রেন চালু করা না হলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা বাড়ছে। সে সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে হলে রেলপথে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের  মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মো. সুবক্তগীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের যাত্রীচাপ বিবেচনায় ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেন সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। আশা করি, শিগগিরই আমরা যাত্রীদের সুখবর দিতে পারব।’

টিকিট কালোবাজারির ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকতা বলেন, ‘আমাদের একটি টিম সর্বদা টিকিট কালোবাজারির ওপর নজর রেখে চলেছে। অনেক সময় এমন চক্র ধরে বিভিন্ন মেয়াদি শাস্তিও প্রদান করা হয়ে থাকে। এতে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি।’


সর্বশেষ সংবাদ