‘যার চলে যায়, সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদ কী যন্ত্রণা’

মৃত শাবকের পাশে মা হাতি
মৃত শাবকের পাশে মা হাতি  © সংগৃহীত

কাপ্তাই হ্রদের নীল পানির পাড়ে নেমে এসেছে এক বেদনার গল্প। সোমবার রাতের আঁধারে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামছিল এক হাতি শাবক। হঠাৎ পা পিঁছলে পড়ে যায় গভীর হ্রদের পানিতে। উঠে দাঁড়ানোর আগেই ডুবে যায় ছোট্ট প্রাণটি। দুদিন কেটে গেছে, কিন্তু সেই শাবকের মৃত্যু যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার মা হাতি। নিথর দেহের পাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে মা; যার চোখে অজানা শোক, বুকভরা নিঃসহায় মায়া।

স্থানীয়রা বলছেন, এ শাবকই সম্প্রতি আলোচনায় আসা সেই ‘গোলাপি হাতি’। বয়স মাত্র ৮ থেকে ১০ মাস। কিন্তু তার মৃত্যুতে স্তব্ধ পুরো বনাঞ্চল। মানুষের মতোই সন্তানহারা এই মা হাতিটিও যেন অনুভব করছে বিচ্ছেদের সেই যন্ত্রণা—যেমনটি গীতিকার হায়দার হোসেন লিখেছিলেন, “যার চলে যায়, সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদ কী যন্ত্রণা।'হাতি

ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটির বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি গ্রামের লিটনের টিলায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাচালংমুখ বনশুল্ক ফাঁড়ির আওতাধীন এ এলাকায় এখন টানটান উত্তেজনা। কারণ, মা হাতিটি মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই তেড়ে আসছে। ফলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এখনো শাবকের মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

বুধবার পর্যন্ত মা হাতিটি দাঁড়িয়ে ছিল হ্রদের পাড়ে—যেখানে ছিল তার সন্তানের দেহ। পরে দেহটি ভেসে অন্যত্র চলে গেলে, মায়ের অবস্থানও পাল্টেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসক দলও।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ জানিয়েছেন, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শাবকটি পাহাড় থেকে পা পিঁছলে পড়ে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। তবে মা হাতির উপস্থিতির কারণে এখনো পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়নি।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত মা হাতি ও হাতির পাল সরে না যাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে, যাতে তাদের আর উত্তেজিত না করা হয়।

কাপ্তাই ও বরকলের পাহাড়ি অরণ্যে প্রায়ই দেখা মেলে ২৪ থেকে ২৬ সদস্যের বুনো হাতির পাল। কিন্তু আজ এই নীরব বনভূমিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এক মায়ের শোকের শব্দ—যেন প্রকৃতিও স্তব্ধ হয়ে আছে সেই নিঃশব্দ ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ