বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও পাহাড়ে যেন পরবাসী—সেমিনারে বক্তারা

'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী বিতর্ক ও বাস্তবতা'
'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী বিতর্ক ও বাস্তবতা'  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামে পাঠশালা রিসার্চ সেলের আয়োজনে 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী বিতর্ক ও বাস্তবতা' শীর্ষক একটি সেমিনার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিনব্যাপি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল হল রুমে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

কৃইজ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ২০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না জান্নাত প্রিয়া, দ্বিতীয় হন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী দুর্জয় দে আইন এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন একই বিভাগের রিমন মাহমুদ।

এম এ আমিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী হোছাইন। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. আলী হোছাইন বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক, সেখানকার স্থায়ী অধিবাসী। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, বাংলাদেশের অন্য যেকোনো অঞ্চল থেকে একজন ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কিনতে পারে না। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে আমাকে আবার নতুন করে সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হয় এমন অবস্থা। বাংলাদেশের মানচিত্রে কি পার্বত্য চট্টগ্রাম নেই? আমি যদি দেশের অন্য কোথাও যেতে পারি, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামেও কেন পারবো না?

তিনি আরও বলেন, শান্তিচুক্তির আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যেভাবে কৌশলে উপজাতিদের খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত করা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে তারা দাবি করতে পারে যে, আমরা আলাদা জাতি, আমাদের আলাদা রাষ্ট্র দিতে হবে। এটি একটি সুপরিকল্পিত বৈচিত্র্য বিচ্ছিন্নতার প্রচেষ্টা। একে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সকল বাংলাদেশি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই অংশ, এবং তা চিরকাল থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে পাঠশালা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ কাউছার উল্লাহ বলেন, পাহাড়ে বাঙালিরা বছরের পর বছর মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই অঞ্চলে বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের। কিন্ত পাহাড়িরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আদিবাসী হয়ে যেতে চায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে বলা হয়েছে সকল চাকরিতে আদিবাসীরা অগ্রাধিকার পাবে। ফলে চাকরিতে বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হবেন কিন্তু বৈষম্যের কারণে চাকরি পাবেন না৷ আমরা চাই এই শান্তিচুক্তি সংস্কার হোক। আদিবাসী শব্দটি দেশভাগের ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকারকে অনুরোধ করবো শান্তিচুক্তির যে ধারাগুলো সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলো পরিবর্তন করে এই বৈষম্য দূর করতে হবে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী বলেন, আমাদের আন্দোলন মূলত অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই, যেখানে সব নাগরিক সমান সুযোগ পাবে। পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিরা এখনো নানা বৈষম্যের শিকার।পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্র জমা না দেওয়া, লাইসেন্সধারীদের দৌরাত্ম্য চলছে। শান্তিচুক্তির পরও শান্তি আসেনি, বরং একটি গোষ্ঠী সুবিধা ভোগ করছে। অথচ এই অঞ্চলে উন্নয়ন হয়েছে বাঙালিদের হাত ধরে। আমরা আমাদের অধিকার ছাড়বো না, প্রয়োজনে আন্দোলন করবো। 

এছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রকৌশলী আবুল কালাম।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের সাবেক শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত বুদ্ধিবৃত্তিক ফোরাম "পাঠশালা-সি এইচ টি রিসার্চ সেল" চট্টগ্রামে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কাজ করে চলছে। ইতোমধ্যে, ফোরামটি অনলাইন সেমিনার, পাঠচক্র এবং আলোচনা চক্রের আয়োজন করে আসছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ স্বনামধন্য ব্যক্তিদের দ্বারা ক্লাস নেওয়া হয়। গবেষণা সেল ফোরামটি পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য জেলার ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence