প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছেন সাহসী শাহরিয়ার

বন্ধুদের উপর ভর করে স্কুলে আসে শাহরিয়ার
বন্ধুদের উপর ভর করে স্কুলে আসে শাহরিয়ার  © টিডিসি সম্পাদিত

জন্ম থেকেই দুই পা ও ডান হাত পুরোপুরি অবশ, বাম হাতেও রয়েছে সীমিত চলনশক্তি—এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বেড়ে উঠছে মোস্তফা শাহরিয়ার। বয়স ১৪ পেরোলেও আজও নিজে চলতে পারে না সে। তবুও থেমে নেই স্বপ্নপূরণের লড়াই। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া গ্রামের এই কিশোর আজ এলাকার অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

প্রবাসী নাগু মিয়া ও গৃহিণী বেবি আক্তার দম্পতির বড় ছেলে শাহরিয়ার বর্তমানে বরুমচড়া শহীদ বশরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রতিদিন প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অটোরিকশায় আসেন, আর স্কুলে ঢোকার পর সহপাঠীদের কাঁধে ভর করে পৌঁছান শ্রেণিকক্ষে। তার শিক্ষাজীবনের শুরু হয়েছিল মায়ের কোলে চড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে। ২০২২ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এখন নবম শ্রেণিতে পড়ছে সে।

শাহরিয়ার বলেন, আমার পা দুটো ও ডান হাত একদমই কাজ করে না। বাম হাতেও শক্তি পাই না। তারপরও চেষ্টা করছি। লেখাপড়া করে আমি চাকরি করতে চাই, যেন মানুষের সেবা করতে পারি। আমার বন্ধুরা আমাকে যেভাবে সাহায্য করছে, আমিও একদিন তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। মানুষ ভাবে, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা। আমি প্রমাণ করতে চাই, আমরাও সমাজের সম্পদ হতে পারি।

আরও পড়ুন: আবু সাঈদ হত্যা মামলার ৮ পুলিশ কর্মকর্তা স্বপদে বহাল, বেরোবি শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

শাহরিয়ারের স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বড় সহায় তার পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীরা। তার ছোট ভাই সাইদ একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং প্রতিদিন তাকে স্কুলে যাতায়াতে সহযোগিতা করে।

শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিফাত জানায়, শাহরিয়ার আমাদের ভাই। সে প্রতিবন্ধী—এই কথাটা আমরা কখনো তাকে বুঝতে দিই না। ক্লাসে সবাই তাকে সাহায্য করি। একসাথে খেলাধুলাও করি। তার মতো বন্ধু পেয়ে আমরা গর্বিত।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহরিয়ার অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। আমরা কখনোই তাকে বুঝতে দিই না যে, সে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। আমরা শিক্ষকরা এবং সহপাঠীরা সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, শাহরিয়ারের মেধা অসাধারণ। সে নিয়মিত ক্লাস করে, পরীক্ষা দেয়, ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নেয়। তার অধ্যবসায় ও মনোবল সব শিক্ষার্থীর জন্যই উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপজেলার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস থেকে নিয়মিত সহায়তা দেওয়া হয়। শাহরিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী। তাকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হবে যাতে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ