মুখিকচু ক্ষেত © টিডিসি
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং ধানের তুলনায় কম লাভ—এই বাস্তবতায় ফসল চাষে পরিবর্তন আনছেন যশোরের শার্শা উপজেলার কৃষকরা। সবজির চাহিদা ও বাজারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তারা ঝুঁকছেন লাভজনক সবজি চাষে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুখিকচু, যা অল্প পরিচর্যায় অধিক ফলন দেয় ও বাজারেও ভালো দামে বিক্রি হয়।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও মাঠপর্যায়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মুখিকচুর ফলন হয়েছে বাম্পার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, রোগবালাইয়ের প্রভাব কম থাকা এবং নিয়মিত কৃষি পরামর্শের কারণে এবার কৃষকরা দারুণভাবে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ১২৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে নিজামপুর ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হেক্টর জমিতে। কেরালখালী, বসন্তপুর, পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর ও ভায়না এলাকাতেও বিস্তৃত জমিতে কচুর চাষ হচ্ছে।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা এবার ৫ থেকে ২০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে মুখিকচু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় গড়ে ৭০-৮০ মণ কচু উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ৪৫-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। অনেকেই বলছেন, ধানের তুলনায় কচু চাষে সময় ও খরচ কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি।
কেরালখালির কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘আমরা আগে ধান করতাম, কিন্তু লাভ থাকত না। এখন মুখিকচু চাষে সময় কম লাগে, খরচ কম ফলনও ভালো। আল্লাহ চাইলে এবার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হবে।’
আরও পড়ুন: বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগের দুই পলাতক নেতা গ্রেপ্তার
এ ছাড়া, এই চাষ মৌসুমি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। জমি পরিচর্যা, ফসল উত্তোলন, পরিষ্কার ও বাজারজাতকরণে অনেক নারী ও পুরুষ খণ্ডকালীনভাবে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন।
বাসাবাড়ি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, চাষিরা এখনো পুরোপুরি মাঠ থেকে কচু তোলা শুরু হয়নি। তবে বাজারে আগাম কচু উঠছে। এখন দামও ভালো। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বাজার কচুতে ভরে যাবে।
তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু অভিযোগও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ী জানান, আগে এই বাজার ছিল মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু এখন কিছু দালালচক্র চাঁদাবাজির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তারা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নিজামপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রেডিং, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি যেন তারা ন্যায্য মূল্য পান।’
আরও পড়ুন: আমাদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল: নোবেলের স্ত্রী
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, মুখিকচু চাষে কোনো মাঠ প্রদর্শনী না থাকলেও কৃষি বিভাগ চাষপদ্ধতি, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা ও বাজার-সংক্রান্ত পরামর্শসহ প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে মুখিকচুর জাত উন্নয়ন ও রপ্তানি সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফসলের আধুনিকায়নের এ যুগে মুখিকচুর মতো দেশি সবজির নতুন করে অর্থনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে, তা-ও আবার সীমান্তঘেঁষা এক কৃষিপ্রধান অঞ্চলে। কৃষক, কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে এ সম্ভাবনাকে আরও টেকসই করা গেলে মুখিকচু হতে পারে শার্শার নতুন অর্থনৈতিক ফসল।