দুই মাসেও কাটেনি ঝুঁকির ডাল: যশোর রোডে মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়ে শতবর্ষী গাছ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ  © টিডিসি

ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণে নির্দেশনা পাওয়া সত্ত্বেও দুই মাস পার হলেও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা অংশে একটি মৃত গাছ বা হেলে পড়া ডালও অপসারণ করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। এতে করে বর্ষা ও ঝড়ের দিনে প্রতিনিয়ত সড়ক ব্যবহারকারীরা পড়ছেন প্রাণহানির শঙ্কায়। গত ২৯ এপ্রিল যশোর জেলা পরিষদ থেকে জেলা প্রশাসনের অধীন তিনটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া এক নির্দেশনায় যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দ্রুত অপসারণের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতাও চাওয়া হয়।

জেলা পরিষদের তথ্যমতে, যশোর সড়ক বিভাগের আওতাধীন এন-৭০৬ জাতীয় মহাসড়কের পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন স্থানে বহু পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাতাস বা বৃষ্টির ধাক্কায় এগুলোর ডাল ভেঙে পথচারী বা যানবাহনের ওপর পড়ার ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।

গত ১৯ জুন নাভারণ কলোনি এলাকায় একটি মৃত গাছ সড়কের ওপর ভেঙে পড়ে। তার আগে বেনেয়ালি ও ঝিকরগাছা উপ-কর কমিশনার অফিসের সামনেও একাধিক ডালপালা হঠাৎ ভেঙে পড়ে। যদিও এসব ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।

স্থানীয় নসিমনচালক রবিউল ইসলাম বলেন, “কয়েকদিন আগে মালামাল নিয়ে ফিরছিলাম, হঠাৎ পেছনে একটি মোটা ডাল পড়ে। সামান্য কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রাণটা বেঁচে যায়।”

নাভারণ থেকে প্রতিদিন অফিসমুখী যাত্রী আতিকুজ্জামান রিমু বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা মানে মৃত্যুকে হাতছানি দেওয়া। বাতাস উঠলেই বুক ধড়ফড় করতে থাকে—না জানি কখন মাথায় গাছ পড়ে।”

যেখানে পাশের শার্শা উপজেলায় ইউএনও কাজী নাজিব হাসানের নেতৃত্বে প্রায় ৮০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডাল অপসারণ করা হয়েছে, সেখানে ঝিকরগাছায় এখনও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

স্থানীয় নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, “একই নির্দেশনায় কাজ পেয়েও এক উপজেলা কাজ সম্পন্ন করেছে, আরেকটি এখনও একটি ডালও কাটেনি। এটা দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া আর কিছু নয়।”

তবে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার জানিয়েছেন, গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। “চিঠির জবাব পেলেই অপসারণ শুরু হবে,” বলেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৭০০টির মতো গাছের অন্তত ৬০ শতাংশই মৃত বা অর্ধমৃত। এর মধ্যে বহু গাছ ইতোমধ্যে উপড়ে পড়ে আছে কিংবা হেলে পড়া অবস্থায় রয়েছে। চলতি বর্ষায় এ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যেন ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচলা’।

জেলা পরিষদের পাঠানো চিঠিতে সাফ বলা হয়, “দীর্ঘদিন ধরে গাছ ও ডালপালা অপসারণের অনুরোধ জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে জীবনহানির ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে গেছে।”

নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামানও বিষয়টি জেলা পরিষদের নজরে আনেন। একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরাও বারবার এ বিষয়ে পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছেন।

যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক কেবল একটি পরিবহণ রুট নয়, বরং এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ শিরা। সেখানে কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা শুধু দায়িত্বহীনতাই নয়, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সরাসরি খেলা। ঝড়-বর্ষার সময় গাছ বা ডাল ভেঙে পড়ে প্রাণহানির পরেই যেন প্রশাসন নড়ে বসবে—এমনটি কাম্য নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!