পিরোজপুরে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছে ‘হোগলাপাটি’

হোগলাপাটি
হোগলাপাটি  © টিডিসি

পিরোজপুরের নাজিরপুরে নারীর সচ্ছলতা ও হতদরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে হোগলাপাটি। হোগলাপাতা সংগ্রহ থেকে শুরু করে পাটি তৈরির পুরো কাজই নারীরা সম্পন্ন করেন। ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে নারী-পুরুষের পারিবারিক বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে এ অঞ্চলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাবার উপর নির্ভরশীল না হয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিচ্ছেন মায়েরা। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী হোগলাপাটি তৈরি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই বহন করছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজিরপুর উপজেলাধীন গাওখালীতে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার হোগলাপাতা এবং হোগলাপাটির বাজার বসে। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া, দীর্ঘা, মালিখালী ও কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের হোগলাপাতা চাষিরা হোগলাপাতা বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এ অঞ্চলের নারীরা বাজার থেকে হোগলাপাতা সংগ্রহ করে তা থেকে নিজ বাড়িতে বসেই পাটি তৈরি করেন। নারীর হাতের অনন্য ছোঁয়ায় হোগলাপাটি তৈরি যেন আজ একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরাও এ কাজে সহায়তা করে থাকেন।

হোগলাপাটির এক নিপুণ কারিগর গাওখালী স্কুল এন্ড কলেজের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি এক দিনে ৮-১০ টি পাটি তৈরি করতে পারি। আমার লেখাপড়ার খরচ আমি নিজেই বহন করি এবং পরিবারকেও সহায়তা করি। আমি দৈনিক প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা ইনকাম করি। তিনি আরও জানান বর্তমানে প্রতিটি পাটি ১০০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলের নতুন কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল থেকে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ১৫

ভ্যানগাড়ি চালক মো: ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর থেকে মুনিরাবাদের বিভিন্ন বাড়ি থেকে হোগলাপাটি সংগ্রহ করে গাওখালী বাজারে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেই। আবার বাজার থেকে হোগলাপাতা সংগ্রহ করে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়। তাই এ দুই দিন আর অন্য কোনো কাজে সময় দিতে পারি না। এতে আমাদের বাড়তি আয়েরও সুযোগ হয়। আর মা- বোনদেরও কষ্ট করে বাজারে যেতে হয় না। ফলে নারীরা পর্দায় থেকে বাড়িতে বসেই এ কাজ করার সুযোগ পায়।

পাইকারি ক্রেতা মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হোগলাপাটি সরবরাহ করি। তবে কোরবানির সময়ে এ পাটির চাহিদা একটু বেশি থাকে। বাসাবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসায়, মাহফিল ও কোরবানির পশু জবাই করাসহ বিভিন্ন কাজে হোগলাপাটি ব্যবহার করা হয়। সময় এবং শ্রেণিভেদে হোগলা পাটির দাম ৭০-১৪০ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়াও হোগলাপাতা থেকে দড়ি, বসত বাড়ির ভেড়া ও আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এমনকি জ্বালানি হিসেবেও হোগলা পাতা ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও বলেন, আগামীতে এ পাটির চাহিদা আরও বাড়তে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ