গাইবান্ধায় হস্ত কুটিরশিল্প মেলার নামে লটারির ফাঁদ!
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ‘হস্ত ও কুটিরশিল্প ও পাটবস্ত্র মেলা’। তবে নামমাত্র কুটিরশিল্প মেলা হলেও বাস্তবে এটি পরিণত হয়েছে লটারির ফাঁদ ও অশ্লীল নৃত্যের আসরে—এমন অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত ২২ মে বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পাওয়ার হাউস মাঠে মেলার উদ্বোধন হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সরেজমিনে মেলাস্থলে দেখা যায়, কুটিরশিল্প বা পাটজাত পণ্যের কোনো স্টল নেই। বরং সেখানে রয়েছে কয়েকটি কসমেটিকসের দোকান, ফুচকা-চটপটির স্টল, স্লিপার বোট এবং ৮-১০টি লটারির টিকিট বিক্রির কাউন্টার। মেলায় প্রবেশের জন্য প্রতিটি টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।
স্টেজে চলছে হিন্দি গানের সঙ্গে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনা, যার মূল লক্ষ্য তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করা। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এই মেলার আড়ালে চলছে জুয়ার মতো লটারির ব্যবসা। লোভনীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার, ইজিবাইকসহ ৪০-৫০টি আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় যুবক রেজওয়ান ইসলাম বলেন, "নৃত্যকে কেন্দ্র করেই মূলত লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আয়োজকদের উদ্দেশ্য একটাই—জনগণকে আকৃষ্ট করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।"
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলেন, "আগামী ২৬ জুন থেকে আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। এই সময় উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে ও অশ্লীল নাচ পরিবেশন করে পরিবেশ নষ্ট করা অনুচিত। রাতে পড়ালেখা করতেও সমস্যা হচ্ছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ রাব্বী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো নয়। ইজিবাইক ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই মেলা না বন্ধ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।"
এ বিষয়ে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য মো. সাজু আকন্দ বলেন, "সব দল মিলে আমরা এই মেলার আয়োজন করেছি। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অনুমতিতে মেলা হচ্ছে। ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, এখানে সব কিছু করা যাবে।"
তবে গাইবান্ধা বিসিকের (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফেরদৌস জানিয়েছেন,
"আমরা এই মেলার আয়োজক নই, আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ডিসির অনুমতিতেই মেলা চলছে।"
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, "মেলার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে লটারির কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। মেলায় নাচগান থাকবেই।"