যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার, স্থায়ী সমাধানে দাবি
- জামালপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ০৫:৩২ PM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০১:০৪ AM
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন চরম মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত এই নদীভাঙনে ইতোমধ্যে সাত শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিনই নতুন নতুন বসতভিটা, কৃষিজমি ও অবকাঠামো যমুনার গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে পাকরুল ও কাঠমার বিভিন্ন অংশে ভাঙনের তীব্রতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ঘরবাড়ি একে একে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর স্রোতে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে রাস্তার পাশে, বাঁধের ওপর কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।অনেকেই খোলা আকাশের নিচে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।
নদীভাঙন কবলিত এলাকার শুক্কুর আলী নামক একজন বলেন, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখানে অনেক স্কুল, মাদ্রাসা ছিল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেগুলো সব আমার চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পাকরুল গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, যমুনা নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। ভিটেমাটি, ফসলি জমি, এমনকি স্কুল-মসজিদও। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
আরেক বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা একসময় গ্রামের শতাধিক পরিবার একসঙ্গে বসবাস করতাম। নদীভাঙনে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির জানিয়েছেন, গত তিন বছরে পাকরুল গ্রামের প্রায় ৬০ ভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনো ৪০ ভাগ এলাকা রক্ষা করা সম্ভব, যদি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ভাঙন কবলিত জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছি। এই জায়গাগুলোর জন্য আমাদের যে বরাদ্দ প্রয়োজন, তার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি; যেন আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজগুলো গ্রহণ করতে পারি। এর অনুমোদন পেলেই কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙন রোধে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা মনে করেন, শুধু সাময়িক ত্রাণ নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদী শাসন এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।
ভুক্তভোগী মানুষ দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন, যাতে যমুনার লাগাতার ভাঙন থেকে তাদের জনপদ ও জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যায়।