সময়ের আগেই পেকে ঝরে যাচ্ছে হিমসাগর আম, চিন্তায় শার্শার আমচাষিরা

ঝরে পড়া আম
ঝরে পড়া আম  © টিডিসি

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর বৃষ্টিহীন দীর্ঘ সময় যেন প্রকৃতির অন্য এক অজানা বার্তা নিয়ে এসেছে যশোরের শার্শায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে হিমসাগরের নরম মধুর রসে পেকে ঝরে পড়ছে গাছের ডালে লেগে থাকা সোনালি স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন এখন রূপ নিচ্ছে দুঃস্বপ্নে, কারণ সরকারি নির্দেশনায় নির্ধারিত সময় আসেনি বলেই চাষিরা সেই ঝরে পড়া আম তুলেও বাজারে তুলতে পারছেন না।

গরমের এমন রুদ্ররূপে প্রাকৃতিক নিয়ম হার মানিয়েছে প্রশাসনিক সময়সীমাকে। শার্শার বাগআঁচড়া অঞ্চলের বহু আমবাগানে দেখা দিয়েছে এ সমস্যা। গাছে গাছে পাকা আমের সুগন্ধ ছড়ালেও, তা এখন যেন বিষাদ ছড়ানো গন্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে চাষিদের জন্য।

দক্ষিণবঙ্গের বহুল আলোচিত বেলতলা আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিছু চাষি হাতে পাকা আম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ব্যবসায়ীরা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। প্রশাসনের কড়াকড়ির ভয়ে কেউ সেই আম কিনতে চাচ্ছেন না। অথচ, সেই আম গাছে থেকেই ঝরে পড়েছে প্রাকৃতিকভাবে।

স্থানীয় চাষি আব্দুল মান্নান জানান, প্রতিদিনই গাছের নিচে পড়ে থাকছে অনেক পাকা আম। কিন্তু বাজারে আনলেও বিক্রি হচ্ছে না। কৃষি কর্মকর্তারা কিছু অনুমতি দিচ্ছেন, কিন্তু প্রতিবারই সেটার জন্য বাড়তি খরচ, সময় ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

একই সুর জুলু নামের আরেক চাষির কণ্ঠেও, ‘আমার বাগানে পেকে পড়ে যাওয়া আমের জন্য অনুমতি পেয়েছি, কিন্তু বাজারে এনে দাঁড়ালে কেউ নিচ্ছে না। সবাই ভয় পাচ্ছে প্রশাসনিক জরিমানার।’

আরও পড়ুন: ঢাকা উত্তরের প্রশাসক এজাজ নিষিদ্ধ হিযবুতের সদস্য, দাবি জুলকারনাইনের 

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, ‘গাছে সব আম একসঙ্গে পাকেনা। যেসব বাগানে আগেভাগে আম পেকে যাচ্ছে, আমরা সেগুলো পরিদর্শন করে অনুমতি দিচ্ছি। তবে সব জায়গায় অনুমতি দিলে অপব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে। কেউ যাতে কেমিক্যাল দিয়ে কাঁচা আম পাকিয়ে না তোলে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।’

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যদি কোনো বাগানে আম আগেভাগে পাকে, তাহলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে তা বাজারজাত করা যাবে। ইতোমধ্যে আমরা বাজার মনিটর করেছি, সবার সহযোগিতায়ই এই মৌসুমকে নিরাপদ রাখতে চাই।’

প্রকৃতির হাতে গড়া এই অকাল পেকে যাওয়া হিমসাগরের জন্য যেমন দায়ী জলবায়ুর বিরূপতা, তেমনি প্রশাসনিক নিয়মকানুনের সীমাবদ্ধতা যেন চাষিদের দুঃখ আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়ের ক্যালেন্ডারও হয়তো নতুন করে ভাবার সময় এসে গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ