যমুনায় ট্রফি উম্মোচন, নারী কাবাডি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ
- স্পোর্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৮ PM , আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৮ PM
দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপের খেলা আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকায় শুরু হচ্ছে। এবারের আসরে ১১ দেশ অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত, রানার্স-আপ ইরান এবং আয়োজক বাংলাদেশ রয়েছে। ঢাকায় ইতোমধ্যেই ১০ অতিথি দল এসে পৌঁছেছে এবং তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ নারী দল, যারা নিবিড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে টিম হোটেলে উঠেছে।
প্রথমবারের মতো যেকোনো পর্যায়ের কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের অংশ হিসেবে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথম আসর হয়েছিল ভারতের পাটনায়, ২০১২ সালের ১ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত। সেই আসরে ভারত ফাইনালে ইরানকে ২৫-১৯ পয়েন্টে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৬ দেশ চার গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ‘সি’ গ্রুপে থেকে অপরাজিত থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। জাপানের কাছে ১৫-১৭ পয়েন্টে হেরে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান; আসরে লাল-সবুজরা ছিল পঞ্চম স্থানে।
এবার ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের সামনে পদক জয়ের হাতছানি। চলতি বছরের মার্চে ইরানে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর থেকেই দলটি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোচিং স্টাফরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় বাংলাদেশ দল এখন ফিটনেস, কৌশলগত দিক এবং দলীয় সমন্বয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা লাল-সবুজের প্রধান শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান কোচ আরদুজ্জামান মুন্সি এবং অধিনায়ক রূপালী আক্তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে তারা প্রথম বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে যেতে প্রস্তুত।
এদিকে মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে সোমবার থেকে ম্যাচগুলো শুরু হবে। এর আগে আজ (১৬ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নারী বিশ্বকাপের ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ট্রফি উন্মোচন করেন, যেখানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ইন্টারন্যাশনাল কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বিনোদ কুমার তিওয়ারি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বাহারুল আলম বিপিএম, সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ এবং অংশগ্রহণকারী দলের অধিনায়করা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন ঢাকায় স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক আয়োজনের মাধ্যমে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে চায়। আসরের আগে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নওয়াজ সোহাগ বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এ আয়োজন সফল করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আমরা নিশ্চিত যে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপের নির্বিঘ্ন আয়োজন নিশ্চিত করবে। বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন পৃষ্ঠপোষকদের উদার সহায়তা ছাড়া সম্ভব হত না।’
এস এম নওয়াজ সোহাগ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কাবাডি পরিবারের প্রতিটি সদস্য এই আসরকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী কাবাডি দলের সদস্যরা বিশ্বমঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক রূপালী আক্তার, “উগান্ডার বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচ। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে চাই। এই প্রতিযোগিতার জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, মেয়েরা সবাই ভালো পারফরম করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। দল নিয়ে আমি ভালো কিছু করার ব্যাপারে আশাবাদী।”
কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা, “আমাদের প্রথম ম্যাচ উগান্ডার সাথে। এই টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোর মতো তারাও কিন্তু পদক জয়ের লক্ষ্য নিয়েই এসেছে। তবে প্রথম ম্যাচে আমাদের একটু সাবধান থাকতে হবে। শুরুর কয়েক মিনিট দেখতে হবে উগান্ডা কোন দিকে বেশি ভালো। প্রতিপক্ষকে বুঝে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলব আমরা। যেহেতু নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ, আমরাও ভালো কিছু পেতে চাই। শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা চেষ্টা করব ভালো কিছু দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।"
আসরের ‘এ’ গ্রুপে ভারত, থাইল্যান্ড, উগান্ডা এবং জার্মানির বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ৬ দেশ নিয়ে সাজানো ‘বি’ গ্রুপে ইরান, নেপাল, চাইনিজ তাইপে, পোল্যান্ড, কেনিয়া এবং জাঞ্জিবার থাকছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আসরের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বিনোদ কুমার তিওয়ারি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম উপস্থিত থাকবেন।