গ্রন্থাগারে পাঠকের অভাবে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না: জেলা প্রশাসক

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইবাদত হোসেন বলেছেন, তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ভাবে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বই পড়ে থাকেন। যার কারণে গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়া পাঠক সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। মেহেরপুর জেলার সরকারি গ্রন্থাগার নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মেহেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, শিশুতোষ, ভ্রমণকাহিনী, ধর্মগ্রন্থ মিলিয়ে ৩০ হাজারেও অধিক বই রয়েছে। তবে বইয়ের অনুপাতে হাজারে একজন পাঠকও যায়না বই পড়তে। দশ বছর ধরে সদস্য অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম শুরু হলেও নিবন্ধিত সদস্য হয়েছে মাত্র ৬১ জন। ফলে সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো গোছানো গণগ্রন্থাগারটিতে সরকারি উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না।

স্থানীয় পাঠক সূত্রে জানা যায়, তাদের আকৃষ্ট করা, সচেতনতা বা যুগোপযোগী তেমন কোন বই সংগ্রহে না থাকায় পাঠক পাচ্ছে না গ্রন্থাগারটি। মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজের বিপরীতে সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নতুন পরিপাটি ভবনের মিলনায়তনটি পাঠ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাঠকদের পড়ার টেবিলের চারিপাশে থরে থরে সাজানো আছে বই। পাঠক কক্ষের পরিবেশ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। ফেব্রুয়ারি মাসের পাঠকদের হাজিরা খাতা দেখে জানা যায়, গড়ে প্রতিদিন পাঠক আসে ২২ জন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দাবি একশ’র উপরে পাঠক আসলেও তারা হাজিরা খাতায় লিপিবদ্ধ না করে চলে যান।

২০০৯ সালে সদস্য অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে গণগ্রন্থাগারের নিবন্ধিত সদস্য মাত্র ৬১ জন। এক সাথে একশ জন পাঠক বই পড়তে পারবেন এমন সুযোগ সুবিধা থাকলেও সবসময়ই অধিকাংশ আসন থাকে ফাঁকা। রয়েছে জনবল সংকটও। এভাবে নানা সমস্যা নিয়েই চলছে শহরের সরকারি গণগ্রন্থাগারটি।

একজনে অনলাইনে ইংরেজী নোবেল পড়ছেন 

গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, এরশাদ সরকারের আমলে গ্রণগ্রন্থাগারটিকে জাতীয়করণ করা হয়। তার আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য কেন্দ্র নামে এটি পরিচালিত হতো। প্রথম দিকে এক হাজার বই নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘদিন মেহেরপুর শহরের গড় পাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে এটি পরিচালিত হচ্ছিল। ২০১২ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজের সামনে লাইব্রেরীর জন্য একতলা বিশিষ্ট নতুন সরকারি ভবন নির্মাণ করা হলে সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

বর্তমানে এই গ্রন্থাগারের একজন জুনিয়র গ্রন্থাগারিক, একজন গ্রন্থাগারিক সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছেন। এখনো ৫টি পদ এখানে ফাঁকা রয়েছে।

গ্রন্থাগারিকটিতে বই পড়ছিলেন মেহেরপুর পৌর কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের ছাত্র হাসানুজ্জামান । গ্রন্থাকার সম্পর্কে তার কাছে জানতে তিনি বলেন, বই পড়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে। স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরীতে যাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে সেমিনার করতে হবে। সালেহীন শাহেদ নামের অপর এক পাঠক জানান, মেহেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারে বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় আমরা জানতেও পারি না কখন কবে এগুলো অনুষ্ঠিত হয়। অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করারও দাবি জানান তিনি।

মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক, লোক গবেষক ও প্রাবন্ধিক আবদুল্লাহ আল আমিন জানান, গতানুগতিক ধারায় পুরাতন আমলের বই আছে সরকারি লাইব্রেরীতে। ফলে এখনকার আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ওগুলো বেমানান। গ্রন্থাগারিকটিকে নতুন প্রজন্মের জন্য ঢেলে সাজাতে হবে। বিভিন্ন ধরণের সায়েন্স ফিকশন, গবেষণাধর্মী বই সংগ্রহের জোর দিতে হবে। তবেই পাঠক সমৃদ্ধ লাইব্রেরীতে পরিণত হবে। শিক্ষকরাও যাতে সেখানে গবেষণার কাজে বিভিন্ন বই পেতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

মেহেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান জুলফিকার মতিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে একশ পাঠক আসেন। লোকবল কম থাকার কারণে অনেক সময় পাঠকের হাজিরা তদারকি করা সম্ভব হয় না। তবে পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ