বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৭২৬২ কোটি টাকা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২২, ১০:৩৯ PM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৫:২৯ PM
বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সরকার বেসরকারি কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকেছে বেশি। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক বড় বেসরকারি কোম্পানির দখলে চলে গেছে। তারা গত এক দশকে এই খাত থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে কামিয়েছে ৪৭২৬২ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) প্রকাশিত ‘দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) ১০ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বানানো হয়েছে।
এতে দেখা যায়, ২০১১-১২ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১২টি কোম্পানিকে দিতে হয়েছে ৪৭ হাজার ২৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: মিরাক্কেলের উপস্থাপক মীর দা এখন ঢাকায়
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে সবার শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। এ চার্জ আদায়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক চীনা কোম্পানি এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস, চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ইউনাইটেড গ্রুপ, পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল), ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাক্যাট এবং সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ।
এর মধ্যে সামিট গ্রুপের অধীনে সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বিবিয়ানা-২-এর ৮০ শতাংশ ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিটের কাছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৫১ মেগাওয়াট। গত এক দশকে গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে প্রায় ৯ হাজার ২৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এগ্রিকোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ২০০ মেগাওয়াট। গত এক দশকে কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে ছয় হাজার ৯৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ৮১০ মেগাওয়াট। এ কোম্পানির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
আরও পড়ুন: টানা ৪র্থ দিনের মত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধীদের স্কুলের শিক্ষকরা
কোম্পানিটি গত এক দশকে ছয় হাজার ৭২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। ইউনাইটেড গ্রুপের ৬টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। তাদের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১হাজার ৫ মেগাওয়াট। গত এক দশকে গ্রুপটি চার হাজার ৮৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। খুলনা পাওয়ার কোম্পানির মোট ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটি এক দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে তিন হাজার ৬৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাংলাক্যাটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। এ গ্রুপটি এক দশকে ৩ হাজার ৪শ ৭৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। ওরিয়ন গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫০৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। এ গ্রুপটি এক দশকে তিন হাজার ৪৫২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে।
এছাড়া, অষ্টম অবস্থানে হোসাফ গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৮৩ মেগাওয়াট। এনার্জি প্রিমা ও হোসাফ পাওয়ার নামে এ গ্রুপের কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এক দশকে এ গ্রুপটি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে দুই হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়ে এর পর রয়েছে মোহাম্মদী গ্রুপ। নবম স্থানে থাকা গ্রুপটি বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। এক দশকে গ্রুপটি এক হাজার ৯১০ কোটি পাঁচ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এছাড়া দশম স্থানে থাকা ম্যাক্স গ্রুপ এক দশকে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, একাদশ স্থানে থাকা সিকদার গ্রুপ এক হাজার ৬১২ কোটি ১২ লাখ টাকা ও দ্বাদশ স্থানে থাকা এপিআর এনার্জি এক হাজার ৫২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এদের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যথাক্রমে ১৮৭ মেগাওয়াট, ১৯৫ মেগাওয়াট ও ৩০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এপিআর এনার্জি যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।