অর্থনীতি ও ব্যবসা একটি দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের জীবনমান নিশ্চিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি গত পাঁচ দশকে কৃষিনির্ভর কাঠামো থেকে ধীরে ধীরে শিল্প ও সেবাখাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্প, প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, শেয়ারবাজার, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইত্যাদি সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো আজ বহুমাত্রিক এবং ক্রমবর্ধমান।
অর্থনীতি ও ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের ইতিহাস স্বাধীনতার পর নতুন কাঠামোতে গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের সম্পদ ও কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অর্থনীতির পুনর্গঠন, কৃষি ও শিল্পে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাজার পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সময়ের সঙ্গে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের বিস্তার ঘটে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সুরক্ষা ও পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ, আমদানি ব্যয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে গেছে। তরুণরা আজ স্টার্টআপ, ই–কমার্স, এগ্রো–বিজনেস, আইটি সার্ভিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাপ–ভিত্তিক সেবা, রেস্টুরেন্ট ও ফ্যাশন খাতে ব্যবসার নতুন ধারা তৈরি করছে। সরকারি উদ্যোগে স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইসিটি ডিভিশন, বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার, এমএমই ফাউন্ডেশন এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পথ খুলে দিচ্ছে। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক দক্ষ মানবসম্পদ, তৈরি হচ্ছে চাকরির নতুন ক্ষেত্র।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও কখনো কখনো অস্থিরতার মুখে পড়েছে। স্বচ্ছতা, সুপরিকল্পিত আর্থিক নীতি এবং বিনিয়োগকারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিবাজার দেশীয় কোম্পানিগুলোকে মূলধন সংগ্রহে সহায়তা করবে এবং বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও গভীরতর হয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ রপ্তানি বাজারে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ, চামড়া, আইটি সার্ভিস, কৃষিপণ্য ও জাহাজ রপ্তানিতে সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিশ্ববাজারের চাহিদা, ডলার–টাকা বিনিময় হার, বৈশ্বিক মন্দা, জ্বালানি সংকট এসব বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
অর্থনীতি ও ব্যবসা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে স্মার্ট অর্থনীতি—ডিজিটাল ব্যাংকিং, ক্যাশলেস লেনদেন, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প, প্রযুক্তিচালিত ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রের উন্নয়ন আরও শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলবে। সঠিক পরিকল্পনা, সুশাসন, দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ আগামী দশকেই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভরশীল ও বিশ্ববাণিজ্যের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস ‘অর্থনীতি ও ব্যবসা’ খাতের সর্বশেষ সংবাদ, প্রতিবেদন ইত্যাদি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। পাঠকের সামনে শুধু অর্থনীতি ও ব্যবসা খাতের সংবাদ নয়, এ খাতে নতুন কর্মস্থান, চাকরি ইত্যাদির বিষয়ও গুরুত্ব দেয়। তরুণ উদ্যোক্তদের সাফল্য, সংগ্রামকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়।