বাকৃবির হোটেলগুলোতে নিম্নমানের খাবার, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত বিভিন্ন হোটেল ও খাবারের দোকানের মাধ্যমে। তবে এসব হোটেল ও দোকানে অস্বাস্থ্যকর এবং নিম্নমানের খাবার অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। 

দীর্ঘদিন ধরেই খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বাধ্য হয়ে তারা অতিরিক্ত দাম দিয়ে মানহীন খাবার গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবেই হোটেল মালিকরা খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে লাগামহীনভাবে অনিয়ম করে চলেছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কোনো স্থায়ী সমাধান মিলছে না।

অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, সময়ের সাথে হোটেলগুলোর খাবারের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই ফুড পয়জনিং সহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। অনেকটা যেন টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা! একসময় হোটেলগুলোতে ৪০ টাকায় পেট ভরে খাওয়া যেত, এখন সেটা আর নেই। দাম বাড়লেও মাছ-মাংসের আকার ছোট হয়েছে। বাজারে মাছ মাংসের দাম কমলেও হোটেলগুলোতে কমে না দাম। 

সরেজমিনে হোটেলগুলো ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের পুরোনো বোতলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নোংরা ফ্রিজে একসাথে মাছ, মাংস ও শাকসবজি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পুরোনো পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে সিংগারা, পুরি, মাছ ও বড়া ভাজা হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালো পাতিলে রান্না করা হচ্ছে মাছ-মাংস। প্লেটগুলোও ব্যবহার শেষে ভালোভাবে না ধুয়ে, হালকা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

04c4b2c0-d412-41ef-b12e-9e040c93df17

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানগুলোতে ডিমের হালি ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে—অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের বাজারমূল্য সাড়ে ১১ টাকা। কিন্তু হোটেলগুলোতে একেকটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। ৫০–৫৫ গ্রাম মুরগির মাংসের পিছ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কয়েক মাস আগেও এক প্লেট খিচুড়ি ছিল ১৫ টাকা; এখন তা ২০ টাকা, কোনো হোটেলে ৩০ টাকা। আগে ৫ টাকার রুটির যে আকার ছিল, এখন তা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৫–৫০ গ্রাম রুই মাছের টুকরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বাজারে সহজলভ্য হলেও হোটেলগুলোতে পাঙাস মাছও দামে চড়া। মাত্র ৫০ গ্রামের মতো পাঙাস মাছের পিছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। আর ছুটির দিনে এক টুকরো গরুর মাংস খেতে গেলেও দামে শতবার ভাবতে হচ্ছে। ৫০–৫৫ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।

শিক্ষার্থীরা জানান, খাবার খাওয়া হয় দেহে শক্তি যোগাতে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে। কিন্তু হোটেলগুলোতে যা বিক্রি হয়, তা যেন বিষ! না মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, না ঢেকে রাখা হচ্ছে খাবার। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া আর ফুড পয়জনিং যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবুও হলগুলোতে খাবারে নিম্নমান এবং ক্লাস পরীক্ষার চাপে এই খাবার অবহেলা করার সুযোগ নেই। দীর্ঘ সময় তা গ্রহণের ফলে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্ভাবনাও রয়েছে। এইসব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়াতে হবে। যদি হোটেল মালিকরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও খাবারের দাম কমাতে রাজি না হয়, তাহলে এসব দোকান সিলগালা করে দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেন ১২৬ বিদেশি, কোন দেশের কতজন

ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ জানান, হোটেলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর রুচিবর্ধক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও খাবার প্রস্তুতির অনিয়ম ও সঠিক তাপমাত্রা না মানার ফলে খাবারের পুষ্টিমান নষ্ট হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যা খাচ্ছে, তা পুষ্টি সমৃদ্ধ নয়।

তিনি আরও জানান, মাছ-মাংস এবং শাকসবজি একই ফ্রিজে সংরক্ষণ করার কারণে সংক্রামক জীবাণু খাবারে ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং পেটের বিভিন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে এসে এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি। যদি তারা নির্দিষ্ট কোনো দোকান সম্পর্কে অভিযোগ দিত, তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নিতাম। খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসে মনিটরিং করতে আগ্রহী।’


সর্বশেষ সংবাদ