এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করতে পারে মেডিকেলসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে মেডিকেলসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্ভাব্য সময়সীমাও প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রমজান মাসের কারণে জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে চায় শীর্ষস্থানীয় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। গুচ্ছসহ বেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা হবে মার্চ-এপ্রিলের পরে।

দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ডিসেম্বর মাসে হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহে সভায় বসতে যাচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি। এ সভায় পরীক্ষার তারিখ ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে আমাদের একটি সভা রয়েছে। সভার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এই সভাতেই মূলত ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।’ 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বঘোষণার কারণে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব এসেছে। এ নিয়ে আলোচনাও এগিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল আছে। এ জন্য ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে এনে ডিসেম্বরে নেওয়ার চিন্তা করছি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করবে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরীক্ষা হয়তো এ বছরেই হয়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা গত বছরের তুলনায় অন্তত দুই মাস এগিয়ে আসতে পারে। জাতীয় নির্বাচন এবং রমজানের কারণে চলতি বছরই এ কার্যক্রম শেষ করতে চান বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেক্ষেত্রে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ভর্তি আবেদন শুরু হতে পারে।

ভর্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই ভর্তির কার্যক্রম শুরু করবে কর্তৃপক্ষ। ফল পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক কিছু আলোচনা হয়েছে। সেখানে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন সবাই। আগামী ৭ অথবা ১২ অক্টোবর ভর্তি কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক কিছু আলোচনা হয়েছে। সেখানে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন সবাই। আগামী ৭ অথবা ১২ অক্টোবর ভর্তি কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তার পরিবর্তে নতুন দায়িত্বে আসছেন তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম।

মূলত নির্বাচনের কারণেই ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছর শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত এক শিক্ষক বলেন, আগের বছরের তুলনায় এগিয়ে এলেও এটিই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার স্বাভাবিক সময়। সাধারণত এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তবে মাঝে করোনাভাইরাস ও আন্দোলনের কারণে সে সময়সূচি মানা যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির নতুন আহবায়ক তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আগামী মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় সবকিছু চূড়ান্ত হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শুরু হবে আবেদন প্রক্রিয়া। ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের কারণে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এগিয়ে আসতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষার সময় এগিয়ে নিয়ে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলী রেজা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী মাসের ৭ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা তিন মাস এগিয়ে আসবে। গত শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়ে চলে শেষ পর্যন্ত।

কবে নাগাদ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ছাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বছর আগে-ভাগেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও রমজান শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির আগেই পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দেব, জানুয়ারির শুরুতেই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। তবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির মিটিংয়ে সবই চূড়ান্ত হবে।’

আরও পড়ুন: চমক রেখে আর্জেন্টিনার দল ঘোষণা, ডাক পেলেন নতুন ৩ মুখ

ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবারের ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন না থাকার সম্ভাবনা বেশি। প্রয়োজনে শিফট বাড়ানো হবে। দুই শিফটের জায়গায় তিন বা চার শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। খুব দ্রুতই ডাকা হবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির মিটিং। সেখানে সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা গত বছরের চেয়ে অন্তত দুই মাস এগিয়ে আসতে পারে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কারণে চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার ব্যাপারে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের পরই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সভায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কবে নাগাদ ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আসলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি তো আমার একার সিদ্ধান্তে হবে না। আমাদের ভর্তি পরীক্ষার যে কোর কমিটি আছে, তাদের সাথে আলোচনা করে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেটা ভালো হবে, আমরা সেটাই করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ুক। আমি চট্টগ্রামের বাইরে আছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই আমি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাই, তাহলে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি উপ-উপাচার্যের (অ্যাকাডেমিক) সঙ্গে প্রাথমিক কথা বলে রাখছি, যাতে আমরা দ্রুতই এটি নিয়ে বসতে পারি।’


সর্বশেষ সংবাদ