গুচ্ছ কমিটির সমন্বয়হীনতা, ভোগান্তিতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা   © সংগৃহীত

রাইসা সুলতানা, এ বছর গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন তিনি। তবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই আরও বেশি চিন্তায় পড়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় গণিত অংশের উত্তর করে তিনি ৫৫ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন।

জহিরুল আলম পাটোয়ারী, তিনি এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বাবা। তার ছেলেও এবার গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে অংশ নিয়ে ৫২ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়েছেন। তবে এ ভর্তিচ্ছুর বাবারও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ তার ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় গণিত অংশের উত্তর করে ৮ নম্বর পেয়েছেন। এ নিয়েই তার যত দুশ্চিন্তা!

ঘটনা এখানেই শেষ নয়! গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল- যে সকল শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত/বায়োলজি বিষয়ের মধ্যে যে বিষয়টি অপশনাল হিসেবে অধ্যয়ন করেছেন, তারা চাইলে গণিত/বায়োলজির পরিবর্তে বাংলা/ইংরেজি অংশের উত্তর করতে পারবেন। তবে বাংলা/ইংরেজি শুধুমাত্র ৪র্থ বিষয়ের (অপশনাল) পরিবর্তে উত্তর করা যাবে।

তবে ফল প্রকাশের পর থেকেই অভিযোগ উঠে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪র্থ বিষয় বায়োলজি হলেও একাধিক শিক্ষার্থী নিজেদের তৃতীয় বিষয় গণিতের পরিবর্তে বাংলা/ইংরেজি অংশের উত্তর করেছেন। সেই সঙ্গে তারা বায়োলজি অংশের উত্তর করেছেন। যা ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ভর্তি পরীক্ষায় ৪০-৫০ নম্বর পেয়েছেন এমন ভর্তিচ্ছুরা জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় গণিত প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছিল। তা সত্ত্বেও যারা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করবে তারা গণিত অংশের উত্তর করেছেন। অন্যদিকে যারা বায়োলজি এবং বাংলা অথবা ইংরেজি বিষয়ের উত্তর করেছেন তারা তুলনামূলক বেশি নম্বর পেয়েছেন। এ অবস্থায় যারা ম্যাথের উত্তর করেনি তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ দিলে গণিতের উত্তর করা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করা হবে।’

এ নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটি সুনির্দিষ্টি ব্যাখ্যা না দিলেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক জানান, ভর্তি পরীক্ষায় কোন বিষয়ে উত্তর করতে হবে আর কোন বিষয়ে উত্তর করতে হবে না, সেটি আমরা ওএমআর শিটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিয়েছি।

এদিকে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের প্রাপ্ত ফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর ‘ক’ ইউনিটে ৮০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৫০ জন, ৭০ এর ওপর এক হাজার ৬২১ জন, ৬০ এর ওপর পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৪৬ জন, ৫০ এর ওপর ২৯ হাজার ২২২, ৪০ এর ওপর ৫৪ হাজার ৯৭৩, ৩০ এর ওপর পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৫৮২ জন। আর ফেল করেছেন ৬৬ হাজার ৭১১ জন।

আরও পড়ুন : চবির কোন ইউনিটে কত আবেদন পড়ল

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানে প্রায় ১২ হাজার আসন রয়েছে। এ বছর বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২৯ হাজারের বেশি ভর্তিচ্ছু ৫০ এর বেশি নম্বর পেয়েছেন। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫০ এর ওপর নম্বর পেলেও ভর্তির সুযোগ মিলছে না প্রায় ১৭ হাজার ভর্তিচ্ছু। এদের অধিকাংশই আবার গণিত অংশের উত্তর করেছেন।

এদিকে দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিগুলো বিশ্লেষণেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্নাতক প্রথমবর্ষে ভর্তিতে ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইঞ্জিনিয়ারিং সমমান বিষয়ে পড়াশোনা করতে ভর্তি পরীক্ষায় ‘গণিত’ প্রশ্নোত্তর করা বাধ্যতামূলক। যা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ নির্ধারণের শর্তাবলিতেও উল্লেখ রয়েছে।

আরও পড়ুন : গুচ্ছের বি ইউনিটের ফল কবে?

এদিকে দেশের আরেকটি স্বায়ত্তশাসিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও যেকোনো বিষয়ে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে আলাদা আলাদাভাবে নির্দেশনা দেওয়া ছিল।

তবে গুচ্ছের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, ওএমআর শিটে এবং ভর্তি পরীক্ষা কমিটির নিকটে এসব বিষয়ে ভর্তিচ্ছুদের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় হতাশ অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকরা। বিষয়টিকে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সমন্বয়হীনতা হিসেবেও উল্লেখ্য করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে সাঈদ আবদুল্লাহ নামে ভর্তিচ্ছু জানান, ‘বাংলা অথবা ইংরেজি কখনো গণিতের বিকল্প হতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষায় গণিত না দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ দিলে যারা গণিতের উত্তর করেছে তাদের অন্যায় করা হবে। ভর্তি পরীক্ষায় গণিতের দক্ষতার পরীক্ষা না দিয়ে কীভাবে তাদেরকে গণিত ও ইঞ্জিনিয়ারিং রিলেটেড সাবজেক্ট দেবে?’

নওশীন তামান্না নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় যারা ৫০ নম্বরের অধিক পেয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বায়োলজি এবং বাংলা অথবা বায়োলজি এবং ইংরেজি বিষয়ের উত্তর করেছে। যারা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে গণিত দাগিয়েছিল তারা তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েছে। কেননা গণিত প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছিল। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না।’

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজম জানান, মেডিকেলের আদলে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া হওয়ার কথা বলা হলেও এই দুটিতে চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। তাই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যাচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক জানান, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে ম্যাথের উত্তর না করলেও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়া যাবে তাহলে সেটি তাদের নিজেদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করবো না।

তিনি আরও বলেন, ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। সেখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির রিকুয়েরমেন্ট কি সেটি উল্লেখ করে দেবেন।


সর্বশেষ সংবাদ