‘কেন বড়দিন উদযাপন?’— আসামে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে স্কুলে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০০ PM
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসামে বড়দিনের উদযাপনে বাধা দিয়ে খ্রিস্টান স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে বড়দিন উদযাপনের সরঞ্জামে আগুনও দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রদেশের নলবাড়ি জেলার পানিগাঁও সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুলে এই ঘটনা ঘটে। বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতাকর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কেন বড়দিন উদযাপন?’— এই প্রশ্ন তুলে ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘জয় হিন্দু রাষ্ট্র’ স্লোগান দিয়ে বিজেপিশাসিত স্কুলটিতে হামলা চালিয়েছে বজরং দল ও ভিএইচপি কর্মীরা। বড়দিন উদযাপনের জিনিসপত্র বিক্রি করায় স্কুলের পাশের একটি দোকানেও হামলা চালিয়েছে তারা।
নলবাড়ি জেলা পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস জানিয়েছেন, স্কুলে হামলার পাশাপাশি একটি দোকানেও হামলা চালিয়েছে কয়েকজন। ওই দোকানে স্যান্টা টুপি এবং মুখোশ বিক্রি করা হচ্ছিল। যে দলটি হামলা চালিয়েছে, সেই দলে সব মিলিয়ে নয়জন ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।
স্কুলটির ফাদার জেমস ভাদাকেইল জানান, ঘটনার সময় স্কুল চত্বরে কেউ ছিল না। স্কুলে শীতের ছুটি চলায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এক হাজার। দুপুর ৩টা নাগাদ কয়েকজন স্কুলে এসে প্রিন্সিপালের খোঁজ করছিলেন। কিন্তু ওই সময় প্রিন্সিপাল ছিলেন না স্কুলে। এর পরেই ওই দলটি স্কুল চত্বরে ভাঙচুর চালায়। স্কুলে ভর্তির একটি বিজ্ঞাপনী ব্যানারও বসানো হয়েছিল। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়। ওরা ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘জয় হিন্দু রাষ্ট্র’ স্লোগান দিচ্ছিল।
এদিকে সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুল চত্বরে প্রবেশ করে ক্রিসমাস উপলক্ষে সাজানো ব্যানার, আলো ও টব ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগে স্কুলের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় অধ্যক্ষ ফাদার বাইজু সেবাস্তিয়ান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন— ভাস্কর ডেকা (৩৪), মানস জ্যোতি পাটগিরি (৩২), বিজু দত্ত (৩৪) এবং বজরং দলের সদস্য নয়ন তালুকদার (৩৭)। তারা সবাই ভিএইচপির সদস্য।
পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস বলেন, ঘটনার পর সন্ধ্যাতেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার প্রেক্ষিতে আমরা এফআইআর রুজু করি। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে মামলা নথিভুক্ত করে বৃহস্পতিবারই ৪ জনকে আটক করি। ভারতীয় ফৌজদারি আইন ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ অনুযায়ী তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আজ (শুক্রবার) আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩২৯(৩) (অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ), ৩২৬(ফ) (আগুন দিয়ে ক্ষতিসাধন), ১৮৯(২) (বেআইনি সমাবেশ), ৩৫১(২) (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন), ৩২৪(৩) ও ৩২৪(৪) (সরকারি বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি) এবং ৬১(২) (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)। পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস জানান, ঘটনার ধারাবাহিকতা নির্ধারণ এবং এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শুক্রবার এই ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, নলবাড়ি জেলার বেলসর থানার অধীন পানিগাঁও এলাকায় সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসাম পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রাজ্যজুড়ে শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সব প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে এই ঘটনার মধ্যেই শিলচরে ক্রিসমাস উপলক্ষে একটি গির্জায় যাওয়ার অভিযোগে বজরং দলের কর্মীরা কয়েকজন হিন্দু যুবককে মারধর করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে উত্তেজনা এড়াতে কয়েকটি গির্জা তাদের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করেছে।