ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে

ট্রাকের ধাক্কায় আগুন ধরে গেল যাত্রীবাহী বাসে, প্রাণ গেল ১০ জনের

ট্রাকের ধাক্কায় আগুন ধরে গেল যাত্রীবাহী বাসে
ট্রাকের ধাক্কায় আগুন ধরে গেল যাত্রীবাহী বাসে  © সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের চিত্রদুর্গা জেলায় যাত্রীবাহী একটি স্লিপার বাস ও দ্রুতগামী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৯ থেকে ১০ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। 

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোররাত আড়াইটার মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক–৪৮ (এনএইচ–৪৮) এটি তুমকুর রোড নামেও পরিচিত এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

এনডিটিভির প্রতিবেদন এবং কর্ণাটক পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের বেশির ভাগই দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

বেসরকারি মালিকানাধীন সিবার্ড কোচের একটি স্লিপার বাস বেঙ্গালুরু থেকে শিবমোগ্গা (শিমোগা) যাচ্ছিল। পথে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডার টপকে বাসটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের আঘাতটি পড়ে বাসের জ্বালানির (ডিজেল) ট্যাংকের কাছে। এতে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বাসে আগুন ধরে যায় এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

কর্ণাটক পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল রাভিকান্ত গৌড়া জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকটি সরাসরি বাসের জ্বালানি ট্যাংকে আঘাত করায় এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে চালক ও কন্ডাক্টরসহ মোট ৩২ জন আরোহী ছিলেন। সংঘর্ষের পর বাসটি সম্পূর্ণভাবে আগুনে পুড়ে যায়। এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাস্থলেই আটজন বাসযাত্রী এবং ট্রাকচালকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্থানীয় পুলিশ, অন্যদিকে আরেক প্রতিবেদন নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ বলে জানায়। কয়েকজন যাত্রী আগুনের মধ্য থেকেও কোনোভাবে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও অনেকে বাসের ভেতরেই আটকা পড়ে দগ্ধ হন।

আরও পড়ুন: চাঁদা নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শচিন জানান, সিবার্ড বাসটি তাদের গাড়িকে ওভারটেক করার পরপরই বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কনটেইনার ট্রাক ডিভাইডার টপকে এসে স্লিপার বাসটির সঙ্গে ধাক্কা খায়, আর সংঘর্ষটি ঘটে বাসের ডিজেল ট্যাংকের কাছেই। বেঁচে ফেরা যাত্রী আদিত্য বলেন, সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকে মানুষের আর্তনাদ শুরু হয়ে যায়। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে বাসের প্রধান দরজাটি খোলা সম্ভব হয়নি। যাত্রীরা জানালার কাচ ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও অনেককে আর বাঁচানো যায়নি। কয়েকজন যাত্রী একে অপরকে টেনে বের করলেও লেলিহান আগুনের মুখে অনেকেই আটকা পড়ে যান।

এ দুর্ঘটনার পর তুমকুর রোডে প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শত শত যানবাহন ও যাত্রী দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে থাকেন। গোকর্ণগামী এক নারী পর্যটক ভিডিও বার্তায় সড়কের করুণ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উদ্ধারকাজ শুরু করে।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি ২ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।

গত নভেম্বরে তেলেঙ্গানায় পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন বাসযাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার পর কর্ণাটকের এই দুর্ঘটনা ভারতে সড়ক নিরাপত্তা, দ্রুতগতি এবং যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটির ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

সূত্র: এনডিটিভি


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!