ভারতের পশ্চিমবঙ্গ
স্কুলের বাথরুমে ছাত্রকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, আত্মহত্যার চেষ্টা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৩ AM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রানিগঞ্জের এক হাইস্কুলে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাথরুমে ডেকে নিয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রকে হুমকি দিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও করেছে একদল যুবক। সেই ভিডিও (সত্যতা যাচাই করা হয়নি) সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। অপমান-লাঞ্ছনা সইতে না-পেরে গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে বাড়িতে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই সময়ের খবরে বলা হয়েছে, বাবা সময়মতো পৌঁছে যাওয়ায় প্রাণে বাঁচে কিশোরের। তার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জানতে পেরে রানিগঞ্জ থানা ও স্কুলের টিচার ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রটির বাবা।
খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে। ছাত্র তার হোয়াটসঅ্যাপ ডিসপ্লে পিকচারে (ডিপি) অন্য স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর ছবি ব্যবহার করে লিখেছিল, ‘মাই ওয়াইফ’। তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হয়। মানসিক চাপে কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি ছাত্রীটি। দুই পরিবার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
এর পরই গত ১৩ নভেম্বর ছাত্রকে স্কুলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে নগ্ন করে ভিডিও তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ছাত্রের পরিবার। সূত্র বছলে, অভিযুক্ত যুবকরা আসানসোলের এক কলেজের ছাত্র।
তাদের দাবি, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। আপত্তিকর ভিডিও তাঁরা দেখেননি বলেও জানিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তাদের বক্তব্য, ঘটনায় দুই পরিবার ও দুই কিশোর-কিশোরী জড়িত থাকায় তদন্তে যেন তাড়াহুড়ো বা অসঙ্গতি না ঘটে, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার সময় ফের পেঁছাল
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে থানায় ডেকে কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এদিকে স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠকে অভিযোগটি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। স্কুলের শিক্ষক সুভাষপ্রসাদ বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। স্কুলে দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। কিন্তু একজন গ্রুপ-ডি কর্মী কাজ করেন। একা সবটা দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।’
মনোবিদদের মতে, এমন ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও অভিভাবকদের নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ। আসানসোলের মনোবিদ ও চিকিৎসক দেবাঞ্জন সাহা বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও ছাত্রদের মনোবিদদের সঙ্গে ইন্টারেকশন প্রয়োজন। আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা জরুরি।’
মোবাইল অ্যাডিকশন রোধে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মা-বাবাই সন্তানের রোল মডেল হতে পারেন, শিশু বা কিশোর-কিশোরীর সামনে যেন তাঁরা অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার না করেন।বাচ্চারা কোনও ভুল কাজের কথাও যদি বলতে চায়, অভিভাবকদের মন দিয়ে শুনে বোঝানো উচিত।'
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পূর্ণ পরিপক্কতা আসে না উল্লেখ করে মনোবিদ ঈশিতা সান্যাল বলেন, ‘স্কুলে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের নিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা জরুরি। যে স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনোবিদ নেই, সেখানে মাঝেমধ্যে বিশেষজ্ঞ এনে বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করা হলে এমন ঘটনা অনেকটা কমবে।’