জাবিতে ‘সেশন বেনিফিট’-এ প্রতি বছর কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থ বৎসরের যেকোন সময়ই অবসরে যাওয়ার সময় হোক না কেন তিনি অর্থ বৎসরের শেষদিন বা সেশনের শেষ দিন অর্থাৎ ২৯ শে জুন পর্যন্ত চাকুরীতে বহাল থাকবেন - বিষয়টি সেশন বেনিফিট নামে পরিচিত। ১৯৯৩ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য প্রথম সেশন বেনিফিট চালু হয় বলে জানা গেছে। পরে বাকি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই নিয়ম চালু করে।

সেশন বেনিফিট নিয়ে বিতর্ক কেন?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পট্রোলার অফিসের তথ্যানুযায়ী একজন সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও রেজিস্ট্রারের প্রায় সমান অর্থাৎ ১ লক্ষ টাকার বেশি। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের বেতন ৭৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মত। সে হিসেবে প্রতিবছর কোটি টাকার উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয় যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে অনেক কিছু করা সম্ভব ছিল বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও প্রগতিশীল শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র রায়হান রাইন বলেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেকোনো বিষয় থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্ধারিত হওয়া উচিত যৌক্তিকতার বিবেচনায় কোনো ব্যক্তিকে সামনে রেখে নয়। এটির কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি আরো বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাবলিক মানি (জনগণের অর্থ) যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যয় হওয়া উচিত। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করা যেতো এই অর্থ দিয়ে। তাই এটি দ্রুত বাতিল করা উচিত।

চলতি সেশনে সেশন বেনিফিটের সুবিধা পাচ্ছেন যেসব শিক্ষক
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলমের জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি সে হিসেবে এ বছরের ৩১ শে ডিসেম্বর ছিল তার শেষ কর্মদিবস, এরকম মোট ৯ জন শিক্ষক, ১৫ জন কর্মকর্তা ও ১২ জন কর্মচারী এবছর সেশন বেনিফিট সুবিধা ভোগ করবেন।

অধ্যাপক নুরুল আলম ছাড়া অন্যান্য শিক্ষকরা হলেন, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মনজুরুল হক, সিন্ডিকেট সদস্য ও কম্পিউটার সায়েন্স ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. শামসুল আলম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আনিসুর রহমান (আনু মুহাম্মদ), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার হাওলাদার, ড মোহা. আব্দুল্লা হেল বাকি ও অধ্যাপক ড. সাদিয়া আহমেদ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম আবুল কালাম।

কর্মকর্তাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের ৬২ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছরের ২৮ আগস্ট। তবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) মোহাম্মদ আলী ছাড়া অন্যান্যদের নাম জানা যায় নি।

কেন বাতিল করা হয়নি সেশন বেনিফিট?
সেশন বেনিফিটের কারণে প্রতিবছর কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে সরকারকে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববদ্যালয় সেশন বেনিফিট বাতিল করে।

বিষয়টি অনুসরণ করে গত বছরের ২৮ আগস্ট সেশন বেনিফিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বিষয়টি স্ট্যাটিউট হিসেবে কার্যকর হতে সিনেট অনুমোদন লাগে। কিন্তু সিনেট সভা আয়োজন না করায় সেশন বেনিফিট বাতিল করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথমত টেকনিক্যাল ফ্ল রয়েছে। অর্থাৎ একদিকে বলা হয়েছে ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যাবে আরেকদিকে বলা হচ্ছে ৬৫ বছর যেদিনই হোক তিনি সেশনের শেষ দিন অবসরে যাবেন। এই বিষয়টির মধ্যেই কনফ্লিক্ট রয়েছে।

“দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক ব্যাপারে বিবেচনা করলেও আমরা দেখি পাবলিক মানি কিভাবে ব্যয় করা হচ্ছে। অনেক সম্মানিত শিক্ষক ও আছেন যারা এই সুবিধা নিতে চান না কিন্তু তারাও বিষয়টির অংশীদার হচ্ছেন।”

“তৃতীয়ত সিন্ডিকেট পাস হলেও কেন সিনেটে অনুমোদন হলো না সেশন বেনিফিট বাতিলের প্রস্তাব? তার উত্তর হচ্ছে এই যে, শুরু থেকেই নির্বাচিত সিনেটকে অকার্যকর রেখেছেন৷ আর সিন্ডিকেটে পাস করে সিনেট আহ্বান না করা প্রমাণ করে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনুগত ব্যক্তিদের থেকে সুবিধা দিতে ও নিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সিনেট আহ্বান করেননি তিনি।”

সিনেট অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণ জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি কার্যকর হওয়ার জন্য পুনরায় সিনেট থেকে সিন্ডিকেটে আসা প্রয়োজন। করোনা মহামারির জন্য সিনেট অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সেশন বেনিফিট বাতিল করা সম্ভব হয়নি।

উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ও একই কথা বলেন। তবে শিক্ষক সমিতি ও কর্মকর্তা সমিতির নির্বাচন হলেও সিনেট কেন আয়োজন করা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সিনেটের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক উপাচার্য বলতে পারবেন।

কবে বাতিল হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, সেশন বেনিফিট বাতিল করার জন্য অনেক আগেই বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশন বেনিফিট বাতিল করেছে। এমনকি আমি নিজেও ২০১৯ সালে বুয়েট থেকে অবসরে গিয়েও সেশন বেনিফিট পাই নি।

তিনি আরও বলেন, সেশন বেনিফিট বাতিল করার নির্দেশ দিলেও যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটি বাতিল করে নি, বাজেটে সেশন বেনিফিটে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি অর্থ বিভাগ দেখবে।

উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, আশা করছি আগামী সিনেট অধিবেশনে সেশন বেনিফিট বাতিল হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence