প্রতিদিন চলে গেস্টরুমের নির্যাতন, ভয়ে মুখ খোলেন না ভুক্তভোগীরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২, ১১:৩২ PM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২, ১১:৩২ PM
‘‘বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত ভাইয়ের গ্রুপে সপ্তাহে তিনদিন সাধারণ গেস্টরুম এবং চার/পাঁচবার করে মিনি গেস্টরুম নেওয়া হয়। প্রতিদিন কেউ না কেউ নির্যাতনের শিকার হন, কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। আমাদের বর্ষের আমরা শুরুতে ৭৫ জন ছিলাম, এখন ৪৫ জন আছি। ২৫ জন নির্যাতনের কারণে হল ছেড়ে দিয়েছে। আরও অনেকের হল ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
শুক্রবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব কথা বলেন হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার আবু তালিব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, থাকেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু হলের ২০১ (ক) নম্বর কক্ষে আবু তালিবকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে একই হলের ২০১৮-১৯ সেশনের চার ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন- সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন।
সংবাদ সম্মেলনে আবু তালিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তিন হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাস চলেন। হলের বাইরে থেকে পড়াশোনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ দুর্বলতাকে পুঁজি করেই শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম-গেস্টরুম করানো হয়। প্রতিনিয়ত ইমিডিয়েট সিনিয়রদের গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়েও হলে অবস্থান করতে হয়। এটি যেন একটি আদালত।
আরও পড়ুন: গেস্টরুমে ছাত্রকে ‘ধোয়া না ছেড়ে সিগারেট শেষ করতে’ বাধ্য করলো ছাত্রলীগ নেতারা
তিনি বলেন, ১০ মার্চ রাত ১২টার পর আমাকে মিনি গেস্টরুমে ডাকা হয়। সামান্য এক ভুলের কারণে উপস্থিতরা সেখানে আমাকে হাতে না ধরে মুখে সিগারেট খেতে বলেন। আমি মুখে নিতে না চাইলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
‘‘যদি সিগারেট না খাই, তাহলে রুমের ভেতর বসিয়ে রেখে সিগারেট খাওয়ানোর হুমকি দেন উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। বাধ্য হয়ে সিগারেট হাতে ধরতে চাইলে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে আমার হাতে আঘাত করেন তারা। আমার শারীরিক গঠন ও হাঁটাচলা নিয়ে তারা বলেন, আমি নাকি মাদকাসক্ত। তারা আমাকে বকাবকিও করেন। নির্যাতনকারী (অভিযুক্ত শান্ত) মুখে সিগারেট দিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে টানতে বলেন। একপর্যায়ে সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে আমি নিঃশ্বাস নিতেও পারছিলাম না।’’
আবু তালিব বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের পর বন্ধুদের গালাগালি করে। গেস্টরুম রাত একটায় শেষ হওয়ার পরে আমি কাপড় গুছিয়ে হল থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বন্ধুরা আমার জিনিসপত্র রেখে দেয়৷ রাতে আমি হল থেকে বাইরে চলে যাই। পরে রাত তিনটায় বন্ধুরা আমাকে হলে নিয়ে আসে। সকালে বাঁধন ও শান্ত (অভিযুক্ত) ঘুম থেকে আমাকে তুলে বাইরে নিয়ে যান। রাতের ঘটনা যেন বাইরের কাউকে না বলি, এ নিয়ে তারা আমাকে সতর্ক করেন।’