জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানার বিদায়ে খুশি, অখুশি

ড. ফারাজানা ইসলাম
ড. ফারাজানা ইসলাম  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বুধবার (২ মার্চ)। দুই মেয়াদে দীর্ঘ আট বছর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার বিদায়ে ক্যাম্পাসে শোকের আবহ তৈরী হওয়াটা অপ্রত্যাশিত কোন বিষয় নয়। কিন্তু প্রত্যাশার প্রতিফলন না ঘটে উল্টোটাই চোখে পড়ছে। সদ্য সাবেক উপাচার্যের বিদায়ে খুশি হতে দেখা গেছে জাবি শিক্ষাথীদের।

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মকান্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য, ট্রল পোস্টের মাধ্যমে সেই খুশি এবং জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে খুশি যেমন হয়েছেন কেউ কেউ আবার অখুশিও আছেন। অনেকেই আবার তার ভালো কাজের প্রশংসা করে ইতিবাচক মন্তব্যও করেছেন। এতে ভালো-মন্দ মিলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৭৬৫ আসনের বিপরীতে ডাকা হয়েছে ১৮ হাজার, তবুও আসন ফাঁকা 

ইমরান শাহরিয়ার নামে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী গত সোমবার (১ মার্চ ) তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন ‘জাহাঙ্গীরনগরে আজ ঈদ,অথচ সালামী দেওয়ার মানুষটাই নেই। কাঁদো জাবিয়ান কাঁদো।’

তিনি তার আরেক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ফারজানা ম্যামের বিদায়ে যদি না কাঁদে তোর মন,কে বলে মানুষ তুই, ভিসির দুশমন।’ তার এসব পোস্টে জাবি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হাস্যরসাত্ক মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মন্তব্যসহ একটি ট্রল ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওর কমেন্টবক্স থেকে জানা যায় সেই ভিভিওটি তৎকালিন ভিসি বিরোধী আন্দোলনের সময় রিশান আহমেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বানিয়েছিলেন।সেটি এখন আবার ফেসবুকে ভাইরাল হলো। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকেও এই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করতে দেখা গেছে। ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা কান্নাজড়িত কন্ঠের বান ধরে বলছে ‘আমরা এই ভিসিকে মিস করবো’, ভিসি ম্যাম অনেক মিস করবো’। তবে অনেকেই আবার হেসে হেসেও কান্না করেছে, একজন আনেকজনকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে দেখা গেছে সেই ভিডিওতে।

ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতাহিদ হোসেন তার ফেসবুকে আইডিতে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ছবি দেন। ছবির ক্যাপশনে লিখেন ‘জাবি মাতার বিদায়, বিদায় মমতাময়ী মা।’ এমন আবেগমাখা পোস্টে লাভ রিয়েক্ট, আবেগি কমেন্টের বদলে হা হা রিয়েক্ট আর ব্যাঙ্গাত্মক কমেন্টই ছিলো বেশি। সেই পোস্টে ১১১টি রিয়েক্টের মধ্য ৯২টি ছিলো হাসির রিয়েক্ট। সেখানে আবার ইমরান ইমু নামে আরেকজন কমেন্ট করে, ‘নক্ষত্রের ও একদিন মরে যেতে হয়।’

আরও পড়ুন: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দিন থেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন’

মুজতাহিদ বলেন, আসলে ভিসির পদটাই এমন যে সবাইকে খুশি করা কঠিন। আর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম টানা দুই মেয়াদে থাকার সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেই মূলত শিক্ষার্থীরা তাকে নিয়ে ট্রল করছে।

ইশতিয়াক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ফারজানা ম্যামের আমলে শিক্ষাথী হত্যার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। এর আগে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। এবং এসব কারণে উপাচার্য পদত্যাগের নজিরও আছে। সেই দিক থেকে তিনি একজন সফল উপাচার্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিলো, তাকে সরানোর জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছে তারপরেও কিন্তু তিনি স্বপদে বহাল ছিলেন। তিনি যদি সেরকম কোন অন্যায় করতেন তাহলে তিনি হয়তো দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে পারতেননা।

এদিকে সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক দুর্নীতি ও শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগের সুরাহা না হওয়ায় তার বাসভবনের সামনে কাঁঠাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। কাঁঠাল নিয়ে মিছিলের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মনে করিয়ে দেন, ২০১৭ সালে ক্যাম্পাসের একটি ঘটনা। সেই বছর ক্যাম্পাসে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৬৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন অধ্যাপক ফারজানা। তিনি অভিযোগ করেন- শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনে কাঁঠাল ছুড়েছিল। গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এই কাঁঠাল মিছিল করেন তারা।

ড. ফারজানা ইসলামের মত এমন ভিসি আর কেউ চাননা বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল রনি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফারজানা ইসলাম একটি লজ্জার নাম। তার বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা দুর্নীতি ও ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ থাকলেও তার অনুসারী চাটুকার শিক্ষকদের সহযোগিতায় কোনো তদন্ত অগ্রগতির মুখ দেখেনি।

আরও পড়ুন: ডেন্টালের ভর্তি আবেদন শুরু ১৩ মার্চ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নিপীড়ন করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।

অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নুরুল আলমকে। পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম প্রথম মেয়াদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। প্রথম মেয়াদ শেষ হলে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিকে আবারও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই বছর ২ মার্চ তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence