৫ মাসে ঢাবির হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার দেড় ডজন শিক্ষার্থী
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:০০ PM , আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:০০ PM
গত পাঁচ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি হলে ১৮ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। মানবাধিকার বিষয়ক শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম 'স্টুডেন্স এ্যাগেইনস্ট টর্চার' (এসএটি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে। আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৬টি হলে ১৮ জন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৩ জন, মাস্টারদা' সূর্য সেন হলে ৩ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৩ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৭ জন, রোকেয়া হলে ১ জন ও জগন্নাথ হলে ১ জন। এছাড়া গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ৩ জন ক্যাম্পাস সাংবাদিক ও ২ জন ফটো-সাংবাদিক ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু এসব ঘটনার মধ্যে মাত্র ৩টি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, করোনা সংক্রমণ কমলে গত বছরের ৫ই অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ছিল কোনো গেস্টরুম নির্যাতন হবে না। কিন্তু 'স্টুডেন্স এ্যাগেইনস্ট টর্চার' (এসএটি) অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ৫ই অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ৬টি হলে ১০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যাতে ভুক্তভোগী হয়েছেন ১৮ জন শিক্ষার্থী। তন্মধ্যে, প্রশাসন কেবল তিনটি ঘটনায় নামে মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও, গত এক বছরে তিনজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহকালে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেগুলোর একটিতেও প্রশাসন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় নি।
আরও পড়ুন- ঢাবির হল চলে ছাত্রলীগের ‘সংবিধানে’
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান নির্যাতন, নিপীড়ন ও সহিংসতাকে আমরা মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে দেখি। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা এর পাঁচ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘কাউকে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।’ নাগরিকরা কোনো নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক দণ্ডের শিকার হবে না- এই প্রতিশ্রুতি দেয়া যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তেমনি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা যেন কোনো নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা সহিংসতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি আবাসিক হলগুলোর অতিথি কক্ষে। যা নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার কেও নীরবে হরণ করছে।
সিফাত বলেন, এখন থেকে এভাবেই নির্যাতনের মতো অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে ষান্মাসিক ও বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরছি যাতে প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তপূর্বক নির্যাতকদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি 'প্রাশাসনিক বিধি' এবং আইন তৈরি করারও প্রস্তাব রাখছি। দ্রুততম সময়ে এই নির্যাতন না থামলে আমরা মাননীয় আচার্য ও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি আফরোজ সুমি, আহনাফ সায়েদ খান, আনাস বিন মনির, সাদ আরমান নাফিস প্রমুখ।