কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগরের পরবর্তী উপাচার্য

অধ্যাপক রাশেদা আখতার, অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, অধ্যাপক মো. নুরুল আলম, অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক ও অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।
অধ্যাপক রাশেদা আখতার, অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, অধ্যাপক মো. নুরুল আলম, অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক ও অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।   © সংগৃহীত

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তিনি টানা দুইবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও এ বছরের ২ মার্চ শেষ হবে তার উপাচার্যের দায়িত্বের মেয়াদ। ফলে আগামী মেয়াদে কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগরের উপাচার্য তা নিয়ে ক্যম্পাস জুড়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের ১১.১ এর ধারা অনুযায়ী, আচার্য সিনেট কর্তৃক মনোনীত তিন ব্যক্তির একটি প্যানেল থেকে অধ্যাদেশের নির্ধারিত নিয়ম ও শর্তাবলী মেনে একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য নিযুক্ত করবেন। আচার্য যোগ্য মনে করলে পূর্ববর্তী উপাচার্যকে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য পুনরায় দায়িত্ব দিতে পারেন। অধ্যাদেশের কোনো ধারাতেই কোন ব্যক্তিকে তৃতীয়বার উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের বিধান এবং ইতিহাসে এ ধরনের নজির নেই। ফলে আগামী ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ শূন্য হতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: চাকরি পাচ্ছেন ‘ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া’ সেই আলমগী

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, এটি একটি প্রশাসনিক ও দায়িত্বশীল পদ। যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক উপায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে এ পদে এক মেয়াদের বেশি থাকলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হয়। এবং উপাচার্যদের একনায়কতান্ত্রিকতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বারংবার অস্থিতিশীল হতে দেখা যায়। ফলে কাউকে এক মেয়াদের বেশি উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম একনেক অনুমোদিত ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ছাত্রলীগকে বড় অংকের আর্থিক সুবিধা দেয়া, এই অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের (শোভন-রাব্বানী) পদত্যাগ, দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, আধিপত্য বিস্তারে ছাত্রলীগকে পকেটস্থ করার অভিযোগে চরমভাবে সমালোচিত।

আলোচনা-সমালোচনার বাইরে ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের এ বছরের ২ মার্চের পর উপাচার্য হিসেবে আর দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তাই ক্যাম্পাসে কে হচ্ছেন পরবর্তী উপাচার্য তা নিয়ে চলছে আলোচনা। জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগরের ২০তম উপাচার্য হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। তারা সামরিক, রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন: ঢাবির দুই হলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ ছাত্রলীগের, ক্ষোভ

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মহলের সচেতন শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য হতে দৌড়াচ্ছেন সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব শেষ হওয়া অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও অধ্যাপক এ. এ মামুন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলী, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার প্রমুখ।

উপাচর্য ফারজানা ইসলাম ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতাবলে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি অস্থীতিশীল হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভিন্ন পর্ষদ যেমন: ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট ও অর্থ কমিটির নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।

এতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করে। এসময় ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ বেরিয়ে নতুন শিক্ষক সংগঠন গড়ে উপাচার্য। নতুন সংগঠনের নাম দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ। যার বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।

আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে গুনতে হবে বাড়তি খরচ

এই সংগঠনের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। যিনি এর আগে উপাচার্য বিরোধী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর সভাপতি ছিলেন। এই সংগঠন থেকে নির্বাচন করে শিক্ষক সমিতির সভাপতিও নির্বাচিত হন তিনি। তবে নিজ স্বার্থ বিবেচনায় ভিসি বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময় দল বদল করেন অধ্যাপক অজিত। ঐ সংগঠনের সভাপতি থাকাকালীন ভিসি বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় চিলেন তিনি।

জাবির ১৯তম উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে নাম এসেছে আট প্রভাবশালী শিক্ষকের। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব শেষ করা অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ'-এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এ শিক্ষক প্রভাবশালীদের দিয়ে লবিং করছেন বলে জানা গেছে।

উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক এম এ মতিন। তিনি বিভাগের সভাপতি, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সৎ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব পাওয়া ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হকও উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন। বিভাগ সভাপতি, সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ডিন, সিনেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা এ অধ্যাপকও উপাচার্য হতে চান। তিনিও লবিং চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: আরও দুই সপ্তাহ বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি: শিক্ষামন্ত্রী

উপাচার্য হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞানবিষয়ক অনুষদের ডিন ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি নিজ স্বার্থে দল পরিবর্তনকারী হিসেবে শিক্ষক মহলে পরিচিত। অধ্যাপক ফারজানার বিরুদ্ধে 'দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে'র সময় তিনি উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করেন। তবে পরে ব্যক্তিস্বার্থে উপাচার্যের বলয়ে যোগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অধ্যাপক অজিতের বারংবার দলবদলের কারণে সরকার ও প্রশাসন বেশ বিব্রত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া বর্তমান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুল আলম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।

উপাচার্য কেমন হবে এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, আমরা এমন উপাচার্য চাই যিনি নিজের ও আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের আখের গুছাতে ব্যস্ত না হয়ে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের সকল অংশীজনের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে মনোযোগী হবেন। আমরা এমন একজনকে উপাচার্য হিসেবে চাই যিনি শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হবেন এবং ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিবেন না। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, উপাচার্য দুই মেয়াদে থাকলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দাতা হয়ে উঠেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দমন করতে উদ্যত হন এবং গুটিকয়েক ক্ষমতালিপ্সু শিক্ষকের বলয় তৈরি করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার আগ্রহ ও সামর্থ আছে এবং দক্ষ প্রশাসক হয়ে উঠবার সম্ভাবনা আছে, এমন একজন শিক্ষককে আমরা উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, যিনি শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবেন তিনিই উপাচার্য হবেন। কিন্তু আমাদের এখানে যারা উপাচার্য হন তারা শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেন না বরং দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রচেষ্টা চালান। ফলে তার ওপর সবার অসন্তেুাষ সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন: আকর্ষণীয় সিভি লেখার কৌশল

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চাচ্ছি না। আরও কিছুদিন যাক। ইটস টু আরলি টু কমেন্ট অন দ্যা ইস্যু। একই বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির।

এর আগে তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এক মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার দরকার নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তৃতীয় মেয়াদে থাকবে কি না, সেটা সরকার জানে। তবে তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার নিয়ম আমার জানা নেই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য কেমন দেখতে চান এবং তার প্রত্যাশা কি এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানামের সাথে একধিকবার মুঠোফোনে কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence