ঢাবিতে সেশনজট বাড়ছে
- জাফর আলী, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৫১ PM , আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৩৩ PM
দেশে ওমিক্রনের বিস্তার রোধে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই অবস্থায় সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আগের ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই নতুন করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করায় বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের অক্টোবরে খোলা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। করোনায় অনলাইনে ক্লাস নিলেও বন্ধ ছিলো সব পরীক্ষা। এই অবস্থায় সেশনজট কমাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডারের শরৎকালীন ও শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়। এছাড়া দ্রুত বিভিন্ন অনুষদ ও ইন্সটিটিউটগুলোকে ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল । এ পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। তবে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এটি ভেস্তে যেতে বসেছে।
শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া পরিকল্পনা বেশিরভাগ বিভাগ বাস্তবায়ন করলেও অনেক বিভাগ নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়নি। এতে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকরির পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এই বিভাগগুলোর মধ্যে টেলিভিশন, ফিল্ম এবং ফটোগ্রাফি, ফিন্যান্স, আরবি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ অন্যতম।
আরও পড়ুন: গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ছিলেন অধ্যাপক ফরিদ, বললেন ঢাবির সহকর্মী
টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ চলতি জানুয়ারি মাসেই পরীক্ষা নেবে বলে জানিয়েছিল তারা। কিন্তু পরীক্ষা নেয়ার কোনো উদ্যোগই নেয়নি বলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন।
এছাড়া আরবি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এখনও তাদের সপ্তম এবং অষ্টম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করেনি। এভাবে ফিন্যান্স বিভাগও তাদের ফাইনাল পরীক্ষা সময়মত নিলেও তারা এখন পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারের ফলাফলই প্রকাশ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান হাবিবা রহমান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ থেকে আমাদের সব সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হবে। শুধু ফাইনাল ইয়ার নয়, চতুর্থ সেমিস্টার, ষষ্ঠ সেমিস্টার ও অষ্টম সেমিস্টারসহ যাদেরই পরীক্ষা বাকি রয়েছে তাদেরটা নিয়ে নেব আমরা।
আরও পড়ুন: দুই দশকে সাত বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির পদত্যাগ
পরীক্ষা নিতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য বিভাগের সাথে আমাদের বিভাগের একটু ভিন্নতা রয়েছে। এতে ব্যবহারিক কিছু ব্যাপার রয়েছে। এখানে বিজ্ঞান বিভাগগুলোর মত হাতে-কলমে অনেক কিছু শেখানো হয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, পরীক্ষার আগে সীমিত করে হলেও নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হবে। কারণ, আমাদের ল্যাব আছে, স্টুডিও আছে, এগুলোর সাথে যদি ওরা পরিচিত না হয় তাহলে শুধু পরীক্ষা দিয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বের হয়ে, চাকরির বাজারে তাকে বেগ পোহাতে হবে। এজন্য পরীক্ষা নিতে একটু দেরি হলেও শিক্ষার্থীরা যেন কিছুটা হলেও শিখতে পারে। আমরা বিভাগ থেকে চিন্তা করেছিলাম যে এভাবে কিছু না শিখেয়ে, কিছু কোর্স পড়িয়েই ওদের বের করতে পারিনা। কারণ, আমাদের বিভাগের সাথে এটা যাচ্ছেনা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষক মাত্র পাঁচজন। তাদের তিনজনই করোনা আক্রান্ত। আর আমাদের পার্টটাইম শিক্ষক যারা আছেন তারা ক্লাস নিয়ে চলে যান, পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন কাজ তারা করতে পারেননা। এটাও পরীক্ষা পেছানোর অন্যতম একটা কারণ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে যারা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের পরীক্ষার ফল দেরিতে প্রকাশের কারণে তারা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। এছাড়া এখনো অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারেনি।
যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ফল পাননি এবং যারা অষ্টম সেমিস্টারের সময় পার হয়ে গেলেও পরীক্ষা দিতে পারেনি তাদের উভয়ের মধ্যেই এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। বিষিয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, যারা এখনো পরীক্ষা দিতে পারেনি তাদের ধৈর্যের বাধ ভাঙতে বসেছে।
আরও পড়ুন: ভিসিকে বহাল রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবে মন্ত্রণালয়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা করোনা সংকটে এমনিতেই পিছিয়ে গিয়েছি। আবার এদিকে পরীক্ষা নিয়ে তালবাহানা হচ্ছে। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে আর আমরা তা করতে পারছিনা। যতই দিন যাচ্ছে ততই হতাশ হচ্ছি।
ওই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা নিয়ে নেয়া হোক। এভাবে আর চলতে পারেনা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি আগে অবগত ছিলাম না। এখন জানতে পারলাম। আমি অনুষদের ডীন এবং বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো। কেননা আমাদের কাজ হচ্ছে দক্ষ ও যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা, কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হোক আমরা তা চাইনা।