ঢাবির লোগো হয়ে গেলো কিন্ডারগার্টেনের!

ঢাবি ও ঢাবির নকল করা নবারুণ কিন্ডারগার্টেনের লোগো
ঢাবি ও ঢাবির নকল করা নবারুণ কিন্ডারগার্টেনের লোগো  © সংগৃহীত

ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাইতো সর্বপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠের লোগোতে ফুটে উঠেছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগুনি রঙের লোগোটির রয়েছে তিনটি অংশ। ওপরে প্রদীপের আলো। তারও ওপরে ‘শিক্ষাই আলো’ লেখা। নিচে দুই ভাগের ডান পাশে একটি চোখ। আর বাঁ পাশে শাপলা ফুল। সবার নিচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখা। আর সেই লোগোটি অবিকল নকল করেছে নবারুণ কিন্ডারগার্টেন নামে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের লোগোটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

নবারুণ কিন্ডারগার্টেন সেই লোগোটিও বেগুনি রঙের। লোগোটির ওপরেও রয়েছে প্রদীপের আলো। তারও ওপরে ‘শিক্ষাই আলো’ লেখাটিও অবিকল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর মতো। নিচে দুই ভাগের ডান পাশে স্বরবর্ণ ‘অ’ এবং ‘আ’। আর বাঁ পাশে ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ক’ এবং ‘খ’। আর সবার নিচে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখার জায়গায় রয়েছে ‘নবারুণ কিন্ডারগার্টেন’।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো তৈরি হয়েছিল যেভাবে

খোঁজ নিয়ে জানাা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটি শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নবগ্রাম এলাকায় অবস্থিত। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কিন্ডারগার্টেন বর্তমানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হযরত আলী।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এই লোগো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি ব্যানার (এখানেও লোগোটি রয়েছে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ব্যানারের মাঝখানে ‘নবারুণ কিন্ডারগার্টেন’ বড় করে লেখা রয়েছে। তার বাঁ পাশে লোগোটি রয়েছে। আর নিচে ‘আদর্শ শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি চলছে’ লেখা রয়েছে। 

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, অধ্যক্ষ হযরত আলী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় গণমাধ্যমের কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।

অধ্যক্ষ হযরত আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মেয়ে মোশাররেফা হযরত ফোন রিসিভ করেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা আমাদের ভুল হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এখন থেকে এই লোগোটা আমরা বন্ধ করে দিবো। এবছর নতুনভাবে লোগোটি তৈরি করা করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এদিকে সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্যাডে অধ্যক্ষ হযরত আলী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নবারুণ কিন্ডারগার্টেন কর্তৃক প্রকাশিত ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহারের ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছকৃত এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রেসের অসাবধনতার ফল, এরসাথে শিক্ষকরা বা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ত নন। ব্যানারটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে আমরা নবারুণ কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।”

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম আইডেন্টিটি অন্যকোন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে না, সেটি কপিরাইট আইনেও বলা আছে। এটা যারা কাজটি করেছে তা ঠিক করেনি।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কাজে সব প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা থাকা দরকার। যেটি তারা করেনি। তাই দ্রুত তাদের এটি পরিবর্তন করার আহবান জানায়। তা না হলে আমরা পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটি করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর ইতিহাস:

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ এই সময়ে বেশ কয়েকবার বদলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। কয়েকবার পরিবর্তন হলেও সব লোগোতে দেশের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও প্রকৃতি ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ যে লোগোটা রয়েছে সেটি তৈরি করেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের যাত্রার পর তখন লোগোতে ছিল চাঁদতারা ও স্বস্তিকা (卐) এবং ট্যাগলাইন ইংরেজিতে “Truth Shall Prevail”। পাকিস্তান আমলে ১৯৫২ সালে এই ব্রিটিশ লোগোটি পরিবর্তন করা হয় এবং স্বস্তিকা বাদ দিয়ে সেখানে আররি হরফে বই জুড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নদী-নৌকার দৃশ্য যোগ করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম পরিবর্তন করা হয় ১৯৭২ সালে। নতুন লোগোর জন্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের খোঁজ পড়ল। তিনি নিজে পেন্সিল দিয়ে লোগোর একটি খসড়া আঁকলেন এবং শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরীকে দায়িত্ব দিলেন এটি করে আনার জন্য। এই লোগোতেই প্রথম বাংলা লিপি ব্যবহার করা হয় এবং ‘শিক্ষাই আলো’ এই স্লোগানটি চালু হয়। ‘সূর্য রশ্মিতে শাপলা’ ছিল এই লোগোর বিশেষত্ব। কিন্তু এই লোগোটি অনেকের পছন্দ হয়নি।

তাই পরের বছর ১৯৭৩ সালে লোগোটি পরিবর্তন করে বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী এটি তৈরি করেন। এই লোগোটির তিনটি অংশ। ওপরের দিকে প্রদীপের আলো। তারও ওপরে লেখা— ‘শিক্ষাই আলো’। নিচে দুই ভাগ করে ডান পাশে একটি চোখ আর বাঁ পাশে শাপলা ফুল।

শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী এক সাক্ষাৎকার জানিয়েছিলেন, লোগোতে চোখ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতীক হিসেবে। চোখের মাঝখানে রয়েছে স্বরবর্ণের প্রথম অক্ষর 'অ'। ফুল ব্যবহার করা হয়েছে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে।

সমরজিৎ রায়চৌধুরীর জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। ১৯৬০ সালে তখনকার চারু ও কারুকলা কলেজ থেকে কমার্শিয়াল আর্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। কলেজটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ওই বছরই কলেজে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে।

শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী

৪৩ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অঙ্গসজ্জা যারা করেছিলেন তাদের একজন সমরজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence