ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো তৈরি হয়েছিল যেভাবে

  © সংগৃহীত

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর শতবর্ষে পা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই দীর্ঘ সময়ে বেশ কয়েকবার বদলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। সর্বশেষ যে লোগোটা রয়েছে সেটি তৈরি করেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ব্রিটিশ শাসন ছিল। সে সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লোগোও ছিল।

পরে পাকিস্তান আমলে সেই লোগো বদলে যায়। এরপর ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে বর্তমান লোগোটির প্রচলন হয়। বেগুনি রঙের লোগোটির তিনটি অংশ। ওপরে প্রদীপের আলো। তারও ওপরে ‘শিক্ষাই আলো’ লেখা। নিচে দুই ভাগের ডান পাশে একটি চোখ। আর বাঁ পাশে শাপলা ফুল।

সমরজিৎ রায়চৌধুরী জানান, চোখ এনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতীক হিসেবে। আর চোখের মাঝখানে স্বরবর্ণের প্রথম অক্ষর। ফুল এসেছে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। শাপলা জাতীয় ফুল হওয়ায় অন্য ফুলের কথাও আর ভাবেননি তিনি।

লোগোটি তৈরির ইতিহাস জানাতে গিয়ে সমরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, নতুন লোগো তৈরির জন্য খোঁজ পড়েছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের।  তিনি তখন উপাচার্যকে বললেন, ‘আমি লোগো করি না, তবে করিয়ে দিতে পারি।’ তারপর স্যার আমাকে ডেকে বললেন, ‘একটা লোগো লাগবে, তুমি করে দাও। খসড়াটা কামরুলকে (পটুয়া কামরুল হাসান) দেখিয়ে নিয়ো।’ বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোগো কামরুল হাসানই করেছেন। আমি খসড়া করে আবেদিন স্যারের কাছে নিয়ে গেলাম।

তিনি তখন দেখে বললেন, ‘এটা আমার পছন্দ হলো না।’ তারপর পেনসিল দিয়ে ড্রইং করে বললেন, ‘এটা করে নিয়ে আসো।’ ওই দিনই করে দিলাম। সেটা স্যারের পছন্দ হলো। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লোগোটো পৌঁছে দিলেন। সেটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। তা দিয়েই খাম, প্যাড সব ছাপা হয়।

সমরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, এরপরই লোগো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলো। বলা হয়, ভালো হয়নি, এটা হয়নি, সেটা হয়নি ইত্যাদি। পত্রপত্রিকায়ও বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হয়। পরে বাতিলও করা হলো। আবারও একটা খসড়া করেছিলাম। পরে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পছন্দ করে। আর সেটিই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

সমরজিৎ রায়চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৭ সালে বাঞ্ছারামপুরে। ১৯৬০ সালে তখনকার চারু ও কারুকলা কলেজ থেকে কমার্শিয়াল আর্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। কলেজটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ওই বছরই কলেজে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে।

৪৩ বছর শিক্ষকতার পর তিনি অবসরে যান ২০০৩ সালে। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অঙ্গসজ্জাকারীদের একজনও সমরজিৎ রায়চৌধুরী। ২০১৪ সালে একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ